পাতা:শোধবোধ-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রথম অঙ্ক
শােধ-বােধ
চতুর্থ দৃশ্য

 সুকুমারী। আজ তোমার আপিসের ছুটি আছে, তোমাকে দোকানে যেতে হবে। খোকার জন্য সাড়ে সাত গজ রেনবো সিল্ক চাই—আর একটা সেলাব সুট। (সতীশের প্রস্থানোদ্যম) শোন শোন ওর মাপটা নিয়ে যেয়ো। জুতো চাই। (সতীশ প্রস্থানোন্মমুখ) ব্যস্ত হচ্চ কেন—সবগুলো ভালো করে’ শুনেই যাও! আজও বুঝি লাহিড়ি সাহেবের রুটি বিস্কিট খেতে যাবার জন্য প্রাণ ছট্ফট করচে। খোকার জন্য ষ্ট্র-হ্যাট্ এনো—আর তার রুমালও এক ডজন চাই। (সতীশের প্রস্থান। তাহাকে পুনরায় ডাকিয়া) শোন সতীশ, আর একটা কথা আছে। শুন্লেম তোমার মেসোর কাছ থেকে তুমি নুতন সুট কেন্‌বার জন্য আমাকে না বলে’ টাকা চেয়ে নিয়েছ। যখন নিজের সামর্থ্য হবে, তখন যত খুসি সাহেবিয়ানা কোরো, কিন্তু পরের পয়সায় লাহিড়ি সাহেবদের তাক্ লাগিয়ে দেবার জন্য মেসোকে ফতুর করে’ দিয়ো না। সে টাকাটা আমাকে ফেবৎ দিয়ো। আজকাল আমাদের বড় টানাটানির সময়।

 সতীশ। আচ্ছা, এনে দিচ্চি।

 সুকুমারী। এখনো দোকান খুল তে দেরী আছে। কিন্তু টাকা বাকি যা থাকে, ফেবৎ দিয়ো যেন। একটা হিসাব রাখ্‌তে ভুলো না। (সতীশের প্রস্থানোদ্যম) শোন সতীশ—এই ক’টা জিনিষ কিন্‌তে আবার যেন আড়াই টাকা গাড়ি ভাড়া লাগিয়ে ব’সোনা! ঐ জন্যে তোমাকে কিছু আন্‌তে ব’ল্‌তে ভয় করে। দু’পা হেঁটে চ’ল্‌তে হ’লেই অমনি তোমার মাথায় মাথায় ভাবনা পড়ে—পুরুষ মানুষ এত বাবু হ’লে তো চলে না! তোমার বাবা রোজ সকালে নিজে হেঁটে গিয়ে নতুন বাজার থেকে মাছ কিনে আন্‌তেন—মনে আছে তো? মুটেকেও তিনি এক পয়সা দেন নাই।

[ ৫৭