শােধ গভীর সমবেদনা ও সহানভূতি নহে, মানব-চরিত্রে অভিজ্ঞতাও ছিল তাঁহার অসাধারণ। সজীব মানব-চরিত্রেই নাটক-উপন্যাসাদির বাহন। তিনি তাঁহার ঐন্দ্রজালিক ভাষায় মানষের প্রাণের রােপকে ফটাইয়া শিশ-চরিত্রগলি পর্যন্ত এই বাক্যেরই সাক্ষ্য প্ৰদান করিবে। মানষ-হিসাবে শরৎচন্দ্রের প্রকৃতি বড়ই মধ্যর ছিল। তাঁহার সরলতা ও উদারতার পরিচয় নাতন করিয়া দিবার প্রয়োজন নাই। তাঁহার স্নেহপ্রবণ হৃদয় ও অকপট ব্যবহারে লোকে মািন্ধ হইত এবং অতি অলপ সময়ের মধ্যে মানষেকে আপন করিয়া লইবার তাঁহার অপবর্ণ ক্ষমতা ছিল। একদিকে যেরপ তিনি সবলপভাষী ও কোমল-স্বভাব ছিলেন, অন্যদিকে তাঁহার চিত্ত যথাৰ্থ ভয়শন্য ছিল। কোনরাপ অন্যায় বা অত্যাচার তিনি সহ্য করতেন না এবং নিভীকভাবে আপন মতামত প্রচার করিতেন। বহৎ সভা-সমিতিতে তিনি যোগদান করিতে কখনও আগ্রহ প্রকাশ করিতেন না বটে, কিন্তু কোন দেশহিতকর মঙ্গল-কাযে। তাঁহার সহযোগিতা কামনা করিলে নিঃসবাথভাবে তিনি উহার সহায়তায় অগ্রসর হইতেন। দেশকে তিনি প্ৰাণ-মন দিয়া ভালবাসিতেন এবং দেশমাতৃকার সেবার সংযোগ পাইলেই নিজেকে গৌরবান্বিত বোধ করিতেন। বাঙলার দভাগ্য, তিনি তাঁহার 'পথের দাবী'র সাহায্যে তাঁহার সবদেশের যে দাবী জগতের সম্মখে নিভয়ে উপস্থিত করিয়াছিলেন, আজ বাঙলা সরকারের আদেশক্ৰমে তাঁহার সেই অতুলনীয় গ্রন্থ বাঙালীর পড়িবার অধিকার নাই। শরৎচন্দ্রের অভু্যুদয়-কালের প্রায় দেড় শত বৎসর পর্বে তাঁহারই এই জন্মভূমি দেবানন্দপারে। আর যে একটি মনীষা-সম্পন্ন বাঙালী (৩) এই গ্রামকে ধন্য করিয়াছিলেন, সেই ভারতচন্দ্রের রচনা-রীতি যেমন বহদিন যাবৎ বঙ্গীয় লেখককুলের আদশ ও অন্যাকরণীয় হইয়াছিল, শরৎচন্দ্রের রচনাও তদ্রপ হইয়া থাকিবে। ভারতচন্দ্র যেমন পদ্য-সাহিত্যে এক (৩) ভারতচন্দ্র রায় (বঙ্গাব্দ ১১১৯-১১৬৭) বিধমান জেলার অন্তঃপাতি ভুরসেট পরগণার মধ্যস্থিত পোড়ো গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। অতি অলপকাল তিনি দেবানন্দপারে বাস করিয়াছিলেন। সেখানে রামচন্দ্র মন্সীর আশ্রয়ে থাকিয়া তিনি পারস্য ভাষা অধ্যয়ন করেন এবং সংস্কৃত ও বঙ্গভাষায় কবিতা রচনা করেন। NV
পাতা:শ্যামাপ্রসাদের কয়েকটি রচনা.pdf/২২
অবয়ব