বিদেশী ভাষার সঙ্গে পরিচয় রাখিতে হইবে। এতকাল ভারতীয়দের ইংরেজী শিখিতে হইয়াছিল। ইংরেজী রাষ্ট্রভাষা ছিল বলিয়া, কিন্তু বাঙালী ইংরেজী ভাষা এবং সাহিত্য আত্মস্থা করিয়াছে তাহার সাহিত্যিক এবং সাংস্কৃতিক মল্যের জন্য। শােধ চাকরির প্রয়োজনে যে শিক্ষার দরকার ছিল বাঙালী তাহা অপেক্ষা অধিক শিখিয়াছে এবং সে শিক্ষাকে আনন্দে পরিণত করিয়াছে। আজ চাকরির প্রয়োজনে ইংরেজীর মাল্য কমিলেও বাঙালী-প্রতিভার নিকট বিদেশী ভাষা ও সাহিত্যের মাল্য এবং প্রয়োজন কমিতে পারে না। পশ্চিমে যে দ্বার একদিন খালিয়া গিয়াছিল, সে দ্বার যদি আরও প্রসারিত করিতে না পারি, তবে সবাধীনতার সার্থকতা কোথায়? যে সমস্ত মহাপরিষ বাঙলাদেশে জন্মগ্রহণ করিয়া বাঙালী সমাজের উন্নতির ভিত্তি সংস্থাপন করিয়া গিয়াছেন, তাঁহারাই একদিন পাশ্চাত্ত্য শিক্ষার সংস্পশে বাঙালী জীবনের বিপােল বিকাশ দেখাইয়া গিয়াছেন। আজ বাঙালী সমাজের সবাধিক গৌরবের সামগ্রী বাঙলা ভাষা এবং সাহিত্য। আমাদের যে দেশপ্রীতির বন্যা একদিন সমস্ত ভারতকে প্লাবিত করিয়াছিল। সে দেশপ্রীতি শািন্ধ কমেই নিঃশেষিত হয় নাই; সেদিন বাঙলার চিত্তের উন্মাদনা সাহিত্যর পেও বাঙালী ভারতবর্ষে অর্থ সম্পদে প্রাধান্য পায় নাই। কিন্তু চিত্তের করিয়া আপনাকে ধন্য মনে করিয়াছে। সত্বদেশী আন্দোলনের বহ পাবে বঙ্কিমচন্দ্ৰ ‘আনন্দমঠে” সন্তানধমের আদশ ঘোষণা করিয়াছেন, সমগ্র ভারতবর্ষের জন্য “বন্দেমাতরম’ মন্ত্র প্রচার করিয়াছেন। রবীন্দ্রনাথের অপবর্ণ সংগীত বাঙালী-চিত্তে দেশপ্রীতির উৎস খালিয়া দিয়াছে। বাঙালী গাহিয়াছে— “ও আমার দেশের মাটি, তোমার পরে ঠেকাই মাথা, তোমাতে বিশ্বমায়ের অচল পাতা।” ○O
পাতা:শ্যামাপ্রসাদের কয়েকটি রচনা.pdf/৫৬
অবয়ব