o stov আমরা রতন রতন লোকটা যে সত্যিই নাপিত তাহাতে আর ভুল নাই । উল্লাসে চোচাইয়া সাড়া দিতে গেলাম, কিন্তু স্বর ফুটিল না । একটা প্ৰবাদ আছে, ভূত-প্ৰেত যাবার সময় কিছু একটা ভাঙ্গিয়া দিয়া" যায়। যে আমার পিছনে ছিল, সে আমার কণ্ঠস্বরটা ভাঙ্গিয়া দিয়াই বিদায় হইল । রতন এবং আরও তিনজন লোক গোটা-দুই লণ্ঠন ও লাঠিসোটা হাতে করিয়া কাছে আসিয়া উপস্থিত হইল । এই তিনজনের মধ্যে একজন ছট্টলাল-সে তবলা বাজায়, এবং আর একজন পিয়ারীর দিবোয়ান।. তৃতীয় ব্যক্তি গ্রামের চৌকিদার। রতন কহিল, চলুন-তিনটে বাজে । চল, বলিয়া অগ্রসর হইলাম। পথে যাইতে যাইতে রতন বলিতে লাগিল, বাবু, ধন্য আপনার সাহস । আমরা চারজনে যে কত ভয়ে ভয়ে এসেচি, তা বলতে পারিনে । এলি কেন ? রতন কহিল, টাকাব লোভে । আমরা সবাই একমাসের মাইনে নগদ পেয়ে গেছি । বলিয়া আমার পাশে আসিয়া গলা খাটো করিয়া বলিতে লাগিল, বাবু, আপনি চলে এলে গিয়ে দেখি, মা বসে বসে কঁাদচেন । আমাকে বললেন, রতন, কি হবে বাবা ? তোরা পিছনে যা । এক মাসের মাইনে তোদের বকশিশ দিচ্ছি। আমি বললুম, ছটু লাল আর গণেশকে সঙ্গে নিয়ে আমি যেতে পারি মা ; কিন্তু পথ চিনিনে । এমন সময় চৌকিদার হাঁক দিতেই মা বললেন, ওকে ডেকে আন রতন, ও নিশ্চয়ই পথ চেনে। বেরিয়ে গিয়ে ডেকে আনলুম। চৌকিদার ছটাকা হাতে পেয়ে তবে আমাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে আসে। আচ্ছা বাবু, কচি-ছেলের কান্না শুনতে পেয়েছেন ? বলিয়া রতন শিহরিয়া উঠিয়া আমার কোটের পিছনটা চাপিয়া ধরিল। কহিল, আমাদের গণেশ পাড়ে বামুন মানুষ, তাই আজ রক্ষে পাওয়া গেছে, নইলে আমি কথা কহিলাম না। প্ৰতিবাদ করিয়া কাহারো ভুল ভাঙ্গিবারা
পাতা:শ্রীকান্ত - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১১৭
অবয়ব