পাতা:শ্রীকান্ত - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

q শ্ৰীকান্ত দেখি, সমস্ত ঘরটা জুড়িয়া বিছানা। আগাগোড়া কার্পেট পাতা, তাহার উপর শুভ্ৰ জাজিম ধপধপ করিতেছে। তাকিয়াগুলায় অড় পরানো হইয়াছে, এবং তাহারই কয়েকটা আশ্ৰয় করিয়া জনকয়েক ভদ্রলোক আশাচৰ্য হইয়া আমার পানে চাহিয়া আছেন । তঁহাদের পরনে বাঙালীর মত ধুতি-পিরান থাকিলেও, মাথার উপর কাজ-করা মসলিনের টুপিতে বেহারী বলিয়াই মনে হইল। এক জোড়া বঁয়া-তবলার কাছে একজন হিন্দুস্থানী তবলচি এবং তাঁহারই অদূরে বসিয়া পিয়ারী বাইজী নিজে। একপাশে একটা ছোট হারমোনিয়াম। পিযারীর গায়ে মুজরার পোশাক ছিল না বটে, কিন্তু সাজসজ্জারও অভাব ছিল না। বুঝিলাম, এটা সঙ্গীতের বৈঠক-ক্ষণকাল বিশ্রাম চলিতেছে মাত্র। আমাকে দেখিয়া পিয়ারীর মুখের সমস্ত রক্ত কোথায় যেন অন্তৰ্হিত হইয়া গেল। তার পর জোর করিয়া একটু হাসিয়া বলিল, এ কি ! শ্ৰীকান্তবাবু যে ! কবে এলেন ? আজই। আজই ? কখন ? কোথা উঠলেন ? ক্ষণকালের জন্য হয়ত বা একটু হতবুদ্ধি হইয়া গিয়া থাকিব, না হইলে জবাব দিতে বিলম্ব হইত না । কিন্তু আপনাকে সামলাইয়া লইতেও বিলম্ব হইল না । বলিলাম, এখানকার সমস্ত লোককেই তা তুমি চেন না, নাম শুনলে চিনতে পারবে না । যে ভদ্রলোকটি সবচেয়ে জমকাইয়া বসিয়াছিলেন, বোধ করি, এ যজ্ঞের যজমান তিনিই। বলিলেন, আইয়ে বাবুজী, বৈঠিয়ে। বলিয়া মুখ টিপিয়া একটুখানি হাসিলেন। ভাবে বুঝাইলেন যে, আমাদের উভয়ের সম্বন্ধটা তিনি ঠিক আঁচ করিয়া লইয়াছেন। তঁহাকে একটা সসম্মান অভিবাদন করিয়া জুতার ফিতা খুলিবার ছলে মুখ নীচু করিয়া অবস্থাটা ভাবিয়া লইতে চাহিলাম। বিচারের সময় বেশি ছিল না বটে, কিন্তু এই কয়েক মুহুর্তের মধ্যে এটা স্থির করিয়া ফেলিলাম যে, ভিতরে আমার যাই থাক, বাহিরের ব্যবহারে তাহা কোনমতেই প্ৰকাশ পাইলে চলিবে না। আমার মুখের কথায়, আমার চোখের চাহনিতে, আমার সমস্ত আচরণের