পাতা:শ্রীকান্ত - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/২৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ዛ » শ্ৰীকান্ত 'দেখিয়াছি যে, বাহির হইতে এই দুটা চোখের দৃষ্টিকে প্ৰত্যয় করা কত বড় অন্যায়, তাহাও নিঃসংশয়ে বুঝিতেছিলাম। গাড়োয়ানেব পুনশ্চ আহ্বানে আর আমি মুহুর্ত বিলম্ব না করিয়া উঠিয়া দাড়াইয়া কহিলাম, আমি শীঘ্রই আর একদিন আসব। বলিয়াই দ্রুতপদে বাহির হইয়া গেলাম । অভয়া কোন কথা কহিল না, নিশ্চল মূৰ্ত্তির মত মাটির দিকে চাহিয়া বসিয়া রহিল। গাড়িতে উঠিয়া বসিতেই গাড়ি ছাড়িয়া দিল ; কিন্তু দশ হাত না যাইতেই মনে পড়িল, ছড়িটা ভুলিয়া আসিয়াছি। তাড়াতাড়ি গাড়ি থামাইয়া ফিরিয়া বাড়ি ঢুকিতেই চোখে পড়িল-ঠিক দ্বারেব সম্মুখেই অভয়া উপুড় হইয়া পড়িয়া, শরবিদ্ধ পশুর মত অব্যক্ত যন্ত্রণায় আছাড খাইয়া যেন প্ৰাণ বিসর্জন করিতেছে। কি বলিয়া যে তাহাকে সান্থনা দিব, আমাব বুদ্ধিব। অতীত। শুধু বাজাহতের ন্যায় স্তব্ধভাবে কিছুক্ষণ দাড়াইয়া থাকিয়া আবার তেমনি নীরবে ফিরিয়া গেলাম। অভয়া যেমন কঁাদিতেছিল, তেমনি কঁদিতেই লাগিল। একবার জানিতেও পাবিল না।--তাহার এই নিগুঢ় অপরিসীম। বেদনাব একজন নির্বাক সাক্ষী এ জগতে বিদ্যমান রহিল। আট রাজলক্ষ্মীর অনুরোধ আমি বিস্মৃত হই নাই। পাটনায় একখানা চিঠি পাঠাইবার কথা, আসিয়া পৰ্যন্ত আমার মনে ছিল, কিন্তু একে ত সংসারে যত শক্ত কাজ আছে, চিঠি লেখাকে আমি কারও চেযে কম মনে করি না। তার পরে, লিখিবই বা কি ? আজি কিন্তু অভয়ার কান্না আমার বুকের মধ্যে এমনি ভারী হইয়া উঠিল যে, তার কতকটা বাহির করিয়া না দিলে যেন বীচি না, এমনি বোধ হইতে লাগিল। তাই বাসায় পৌঁছিয়াই কাগজ-কলম। যোগাড় করিয়া বাইজীকে পত্র লিখিতে বসিয়া গেলাম। আর সে ছাড়া আমার দুঃখের অংশ লইবার লোক ছিলই বা কে ! ঘণ্টা