পাতা:শ্রীকান্ত - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/২৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্ৰীকান্ত ዓቅ፧ দুই-তিন পরে সাহিত্যচর্চা সাঙ্গ করিয়া যখন কলম রাখিলাম, তখন রাত্রি বারোটা বাজিয়া গেছে ; কিন্তু পাছে সকাল বেলায় দিনের আলোকে এ চিঠি পাঠাইতে লজ্জা করে, তাই মেজাজ গরম থাকিতে থাকিতেই তাহা সেই রাত্ৰেই ডাক-বাক্সে ফেলিয়া দিয়া আসিলাম । একজন ভদ্র নারীর নিদারুণ বেদনার গোপন ইতিহাস আর একজন রমণীর কাছে প্ৰকাশ করা। কৰ্ত্তব্য কি না, এ সন্দেহ আমার ছিল ; কিন্তু অভয়ার এই পরম এবং চরম সঙ্কটেব কালে, যে রাজলক্ষ্মী একদিন পিয়ারী বাইজীরও মর্মান্তিক তৃষ্ণ দমন করিয়াছে, সে কি হিতোপদেশ দেয়, তাহা জানিবার আকাজক্ষা আমাকে একেবাবে অতিষ্ঠ করিয়া তুলিল। কিন্তু আশ্চর্য এই যে, প্রশ্নটা উল্টা দিক দিয়া একবারও ভাবিলাম না । অভয়ার স্বামীর উদ্দেশ না পাওয়ার সমস্যাই বার বার মনে উঠিয়াছে ; কিন্তু পাওয়ার মধ্যেও যে সমস্যা জটিলতাব হইয়া উঠিতে পারে, এ চিন্তা একটিবারও মনে উদয় হইল না। আব্ব এ গোলযোগ আবিষ্কার করিবার ভারটা যে বিধাতাপুরুষ আমার উপরেই নির্দেশ করিয়া রাখিয়াছিলেন, তাহাই বা কে ভাবিয়াছিল। ! দিন-চার-পাচ পরে আমার একজন বর্মী কেরাণী টেবিলের উপর একটি ফাইল রাখিয়া গেল-উপরেই নীল পেন্সিলে বড় সাহেবের মন্তব্য। তিনি কেন্সটা আমাকে নিম্পত্তি করিতে হুকুম দিয়াছেন। ব্যাপারটা আগাগোড়া পডিয়া মিনিট কয়েক স্তম্ভিত হইয়া বসিয়া রহিলাম। ঘটনাটি সংক্ষেপে এই-- - আমাদের প্রোম অফিসের একজন কেরাণীকে সেখানকার সাহেব ম্যানেজার কাঠ-চুরির অভিযোগে সসপেণ্ড করিয়া রিপোর্ট করিয়াছেন । কেরাণীর নাম দেখিয়াই বুঝিলাম, ইনিই আমাদের অভয়ার স্বামী। ইহারও চার-পাঁচ-পাত জোড়া কৈফিয়ৎ ছিল। বৰ্মা রেলওয়ে হইতে যে কোন গুরুতর অপরাধে চাকরি গিয়াছিল, তাহাও এই সঙ্গে অনুমান করিতে বিলম্ব হইল না। খানিক পরেই আমার সেই কেরাণীটি আসিয়া জানাইল, এক ভদ্রলোক দেখা করিতে চাহে। ইহার জন্য আমি প্ৰস্তুত হইয়াই ছিলাম। নিশ্চয় জানিতাম, প্রোম হইতে তিনি কেসের তদ্বির করিতে স্বয়ং আসিবেন। সুতরাং কয়েক মিনিট পরেই ভদ্রলোক সশরীরে