পাতা:শ্রীকান্ত - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/২৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>ፃ द्वैशंस्तु তৈাব পরে এমন একদিন এসে পড়ল, যেদিন পিয়ারী তার প্রাণাধিক প্রিয়তমকে নিঃশব্দে দূরে সরিয়ে দিলে। অভয়া জিজ্ঞাসা করিল, তারপরে কি হ’ল জানেন ? জানি । তার পরে আর নেই। অভয়া একটা নিঃশ্বাস ফেলিয়া কহিল, আপনি কি এই বলতে চান যে, আমি এক নয়-এমনই দুর্ভাগ্য মেয়েমানুষের অদৃষ্ট চিরদিন ঘটে আসচে, এবং সে দুঃখ সহ্য করাই তাদের সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব ? আমি কহিলাম, আমি কিছুই বলতে চাইনে। শুধু এইটুকু আপনাকে জানাতে চাই, মেয়েমানুষ পুরুষমানুষ নয়। তাদের আচার-ব্যবহার এক তুলাদণ্ডে ওজন করাও যায় না, গেলেও তাতে সুবিধা হয় না। কেন হয় না, বলতে পারেন ? না, তাও পারিনে । তা ছাড়া আজ আমার মন এমনি উদভ্ৰান্ত হয়ে আছে যে, এই সব জটিল সমস্যার মীমাংসা করবার সাধ্যই নেই। আপনাব প্রশ্ন আমি আর একদিন ভেবে দেখব। তবে আজ শুধু আপনাকে এই কথাটি ব’লে যেতে পারি যে, আমার জীবনে আমি যেক’টি বড় নারী-চরিত্র দেখতে পেয়েছি, সবাই তঁরা দুঃখের ভেতর দিয়েই আমার মনের মধ্যে বড় হয়ে আছেন। আমার অন্নদাদিদি যে তঁর সমস্ত দুঃখের ভার নিঃশব্দে বহন কবা ছাড়া জীবনে আর কিছুই করতে পারতেন না, এ আমি শপথ ক’রেই বলতে পারি । সে ভার অসহ্যু হলেও যে তিনি কখনো আপনার পথে পা দিতে পারেন, এ কথা ভাবলেও হয়ত দুঃখে৷ আমার বুক ফেটে যাবে। একটি চুপ করিয়া থাকিয়া বলিলাম, আর সেই রাজলক্ষ্মী। তার ত্যাগের দুঃখ যে কত বড়, সে ত আমি চোখে দেখেই এসেছি। এই দুঃখের জোরেই আজ সে আমার সমস্ত বুক জুড়ে আছে। অভয়া চমকাইয়া কহিল, তবে আপনিই কি তঁারবলিলাম, তা না হ’লে সে এত স্বচ্ছন্দে আমাকে দূরে সরিয়ে দিতে পারত না, হারাবার ভয়ে প্ৰাণপণে কাছে টেনে রাখতেই চাইত। ' শ্ৰীকান্ত (২য়)-৭