পাতা:শ্রীকান্ত - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/২৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

गंगा So করো দুটাছুটি আদালতে। বরঞ্চ, থেমে গেলে ইচ্ছা হয় একবার ঘুরে এসে দুটো ভাল-মন্দ পরামর্শ দাও-পাঁচজনের কাছে নাম হবে। কি বলেন ? একটু চুপ করিয়া তিনি পুনশ্চ কহিলেন, আর এই লোকের ব্যামোস্যামোয়-আমি ত মশাই, পাডা মাড়াই না ; তখখনি ব’লে বসবে, দাদা, মরিস-এ বিপদে দু’টাকা দিয়ে সাহায্য কর। মশাই, মানুষের মরণ-বাচনের কথা বলা যায় না-তাকে টাকা দেওযা, আর জলে ফেলে দেওয়া এক-বরঞ্চ জলে ফেলে দেওয়াও ভাল, কিন্তু সে ক্ষেত্রে না । না হয়ত বলিবে, এসে রাত্রি জগতে । আচ্ছা মশাই, আমি যাবে। তার অসুখে রাত্রি জগতে, কিন্তু এই বিদেশ-বিভুয়ে আমার কিছু একটা-মা শীতলা না-করুন, এই নাক-কান মলচি মা ! বলিয়া জিভ কাটিয়া তিনি নাকে একবার হাত ঠেকাইয়া নিজের হাতে নিজেব দুই কান মলিয়া একটা নমস্কার করিয়া বলিলেন, আমরা সবাই তঁর চরণেই তা পড়ে আছিকিন্তু বলুন দেখি, সে বিপদে আমায় দেখে কে ? এবার আমি আর সময় দিতেও পারিলাম না । আমাকে মৌন দেখিয়া তিনি মনে মনে বোধ করি একটু দ্বিধায় পড়িয়া বলিলেন, দেখুন দেখি সাহেবদের। তাবা কখখনো ওরূপ স্থানে যায় কি ? কখখনো না। নিজের একটা কার্ড পাঠিয়ে দিয়ে ব্যস। হয়ে গেল!! তাই তাদের উন্নতিটা একবার চেয়ে দেখুন দেখি। তার পরে ভাল হলে, আবার যেমন মেলমেশা, সব তেমনি । মশাই, কারুর ঝঞ্চাটের মধ্যে কখনো যেতে নাই। অফিসের বেলা হইয়াছে বলিয়া উঠিয়া পড়িলাম। এই প্রাজ্ঞের সাধু পরামর্শের বলে এতটা বয়সে যে খুব বেশি মানসিক উন্নতি হওয়া আমার সম্ভবপর, তাহা নহে। এমন কি মনের মধ্যে খুব বেশি আন্দোলনও উঠিল না । কারণ, এরূপ বিজ্ঞ ব্যক্তির একান্ত অভাব পল্লীগ্রামেও অনুভব করি নাই ; এবং অপরাপর দুর্নােম ভঁহাদের যতই থাকুক, পরামর্শ দিতে কার্পণ্য করেন, এ অপবাদও শুনি নাই ; এবং এ পরামর্শ যে সুপরামর্শ, তা সামাজিক জীবনে তত না হোক, পারিবারিক জীবনে, জীবন-যাত্রার কাৰ্যে যে অবিসংবাদী সাধু উপায়, তাহা দেশের লোক মানিয়া লইয়াছে।