পাতা:শ্রীকান্ত - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/২৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

*确意 শ্ৰীকান্ত বাঙ্গালী গৃহস্থ-ঘরের কোন ছেলে যদি - অক্ষরে-অক্ষরে ইহা প্ৰতিপালন করিয়া চলে, তাহাতে বাপ-মা অসন্তুষ্ট হন-বাঙ্গালী পিতা-মাতাব বিরুদ্ধে এত বড় মিথ্যা বদনাম রটনা করিতে পুলিসের সি-আই-ডিব লোকেরও বোধ করি বিবেকে বাধে। সে যাই হোক, কিন্তু এই প্রাজ্ঞতার ভিতরে যে কত বড় অপরাধ ছিল, সপ্তাহ দুই গত না হইতেই, ভগবান ইহারই সাহায্যে আমার কাছে প্ৰমাণ করিয়া দিলেন। সেই অবধি অভয়াব বাড়ির দিকে আর যাই নাই । তাহার সমস্ত অবস্থার সহিত তাহার কথাগুলি মিলাইয়া লইয়া, আগাগোড়া জিনিসটা জ্ঞানের দ্বাবা এক বকম কবিয়া দেখিতে পাবিতাম-সে কথা সত্য । তাহার চিন্তার স্বাধীনতা, তাহার আচবণের নির্ভীক সততা, তাহদের পরস্পরের অপরূপ ও অসাধারণ স্নেহ আমার বুদ্ধিকে সেই দিকে নিরন্তর আকর্ষণ করিত, ইহাও ঠিক ; কিন্তু তবুও আমার আজন্মের সংস্কাব কিছুতেই সেদিকে পা বাড়াইতে চাহিত না । কেবলই মনে হইত, আমার অন্নদাদিদি এ কাজ করিতেন না। কোথাও দাসীবৃত্তি করিয়া লাঞ্ছনা, অপমান, দুঃখেব ভিতর দিয়াও বরঞ্চ তার বাকি জীবনটা কাটাইয়া দিতেন ; কিন্তু ব্ৰহ্মাণ্ডের সমস্ত সুখের পরিবর্তেও, যাহার সহিত র্তাহার বিবাহ হয় নাই,--তাহার সহিত ঘর করিতে রাজী হইতেন না। আমি জানিতাম, তিনি ভগবানে একান্তভাবে আত্মসমৰ্পণ করিয়াছিলেন । র্তাহার সেই সাধনার ভিতর দিয়া তিনি পবিত্রতার যে ধারণা, কর্তব্যের যে জ্ঞানটুকু লাভ করিয়াছিলেন,-সে কি অভয়ার সুতীক্ষ বুদ্ধির মীমাংসার কাছে একেবারে ছেলেখেলা ? অভয়ার একটা কথা হঠাৎ মনে পড়িল। তখন ভাল করিয়া সেটা তলাইয়া বুঝিবার অবকাশ পাই নাই। সেদিন সে কহিয়াছিল, শ্ৰীকান্তবাবু, দুঃখভোগ করার মধ্যে একটা মারাত্মক মোহ আছে। মানুষ বহু যুগের জীবনযাত্রায় এটা দেখিয়াছে যে, কোন বড় ফলই বড় রকম দুঃখভোগ ছাড়া পাওয়া যায় না। তার জন্মজন্মান্তরের অভিজ্ঞতা আজ এই ভ্রমটাকে একেবারে সত্য বলিয়া জানিয়াছে যে, জীবনের মানদণ্ডে একদিকে যত বেশি দুঃখের ভার চাপানো যায়, আর একদিকে তত বড়