পাতা:শ্রীকান্ত - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/২৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

so ौकig চিন্তার, জ্ঞানের ধারা যে কত বড় ভুলের মধ্যে চালনা করা যায়, সে কি আপনি জানেন না ? ওই নামের ভুলেই তা সকল দেশে, সকল যুগে বিধবার চাল-চলনটাকেই সবচেয়ে শ্ৰেষ্ঠ বলে ভেবে এসেচে। ইহাই নিবর্থক ত্যাগের নিস্ফল মহিমা, শ্ৰীকান্তবাবু-একেবারে ব্যৰ্থ, একেবারে ভুল ; মানুষের ইহ-পরকাল পণ্ড ক’রে দেবার এত বড় ছায়াবাজি अf< cमझे । তখন আর তর্ক না করিয়া চুপ করিয়া গিয়াছিলাম। বস্তুতঃ তর্ক ক<িয়। পরাস্ত করা তাহাকে একপ্রকার অসম্ভব ছিল। প্ৰথম যখন জাহাজে পরিচয় হয়, তখন ডাক্তারবাধু শুধু তাহার বাহি%টাই দেখিয়া তামাসা করিয়া বলিয়াছিলেন, মেয়েটি ভারি forward ; কিন্তু তখন দু’জনের কেহই ভাবি নাই, এই forward কথাটার অর্থ কোথায় গিয়া দা ভাইতে পারে । এই মেয়েটি যে তাহার সমস্ত অন্তব্যটাকে পৰ্যন্ত কিরূপ অকুষ্ঠিত তেজে বাহিরে টানিয়া আনিয়া সমস্ত পৃথিবীর সম্মুখে মেলিয়া ধরিতে পারে, লোকের মতামত গ্ৰাহ করে না।--তখন তাহার ধারণাও আমাদের ছিল না। অভয়া ত শুধু তাহার মতটাকে মাত্র ভাল প্রমাণ করিবাব জন্যই কথা-কাটাকাটি করিত না,-সে তাহার নিজের কাজটাকে সবলে জয়ী করিবার জন্যই যেন যুদ্ধ করিত। তাহার মত এক রকম-কাজ আর এক রকম ছিল না বলিয়াই বোধ করি, অনেক সময়ে তাহার মুখের উপর জবাব খুজিয়া পাইতাম না,-কেমন এক রকম থতামত খাইয়া যাইতাম ; অথচ বাসায় ফিরিয়া আসিয়া মনে হইত, এই ত বেশ উত্তর ছিল। যাই হোক, তাহার সম্বন্ধে আজও যে আমার মনের দ্বিধা ঘুচে নাই, এ কথা ঠিক। যতই আপনাকে আপনি প্রশ্ন করিতাম, -এ ছাড়া অভয়ার আর কি গতি ছিল, ততই মন যেন তাহারই বিরুদ্ধে বঁাকিয়া দাড়াইত । যতই নিজেকে বলিতাম, তাহাকে অশ্রদ্ধা করিবার লেশমাত্র অধিকার আমার নাই-ততই যেন অব্যক্ত বিতৃষ্ণায় অন্তর ভবিয়া উঠিত। আমার মনে পড়ে, এমনি একটা কুষ্ঠিত অপ্ৰসন্ন মন লষ্টয়াই আমার দিন কাটিতেছিল বলিয়া, না পারিতাম তাহার কাছে যাইতে, না পারিতাম তাহাকে একেবারে দূরে ফেলিয়া দিতে।