পাতা:শ্রীকান্ত - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/২৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ਢ እ ©bሦ এমনি সময় হঠাৎ একদিন সহরের মাঝখানে প্লেগ আসিয়া তাহার ঘোমটা খুলিয়া কালো মুখখানি বাহির করিয়া দেখা দিল! হায় রে! তাহাকে সমুদ্ৰ-পারে ঠেকাইয়া রাখিবার লক্ষ-কোটী যন্ত্র-তন্ত্র, কর্তৃপক্ষের নিষ্ঠুরতম সতর্কতা-সমস্তই এক মুহুর্তে একেবারে ধূলিসাৎ হইয়া গেল। মানুষের আতঙ্কের আর সীমা-পরিসীমা রহিল না। অথচ সহরের চোঁদআন লোক হয় চাকুরিজীবী, না হয় বাণিজ্যজীবী। একেবারে দূরে পালাইবারও যো নাই-এ যেন রুদ্ধ ঘরের মাঝখানে অকস্মাৎ কে ছু চোবাজি ছুড়িয়া দিল। ভয়ে এ-পাড়ার মানুষগুলো স্ত্রী-পুত্রের হাত ধরিয়া পোটলা-পুটলি ঘাড়ে করিয়া ও-পাড়ায় ছুটিয়া পালায়, আর ওপাড়ার মানুষগুলো ঠিক সেই সব লইয়া। এ-পাড়ায় ছুটিয়া আসে। ‘ইন্দুর বলিলে আর রক্ষা নাই । সেটা মরিয়াছে কি মরে নাই, তাহা শুনিবার পূর্বেই লোক ছুটিতে সুরু করিয়া দেয়। মানুষের প্রাণগুলা যেন সব গাছের ফলের মত প্লেগের আবহাওয়ায় এক রাত্রেই পাকিয়া উঠিয়া বেঁটায় বুলিতেছে,-কে যে কখন টুপ করিয়া খসিয়া নীচে পড়িবে তাহার কোন নিশ্চয়তাই নাই । সে দিনটা ছিল শনিবার। কি একটা সামান্য কাজের জন্য সকালে বাহির হইয়াছি । সহরের মধ্যে একটা গলির ভিতর দিয়া বড় রাস্তায় পড়িতে দ্রুতপদে চলিয়াছি, দেখি, অত্যন্ত জীর্ণ পুরাতন একটা বাটীর দোতালার বারান্দায় দাড়াইয়া ডাকাডাকি করিতেছেন প্ৰাজ্ঞ মনোহর চক্রবর্তী । হাত নাড়িয়া বলিলাম, সময় নাই। তিনি একান্ত অনুনয়ের সহিত কহিলেন, দু-মিনিটের জন্য একবার উপরে আসুন শ্ৰীকান্তবাবু, আমার বড় বিপদ । কাজেই সম্পূর্ণ অনিচ্ছা সত্ত্বেও উপরে উঠতে হইল। আমি তাই ত মাঝে মাঝে ভাবি, মানুষের প্রত্যেক চলাফেরাট পর্যন্ত কি একেবারে ঠিক করা! নইলে, আমার কাজও গুরুতর ছিল না, এ গলিটার মধ্যেও আর কখনো প্ৰবেশ করি নাই। আজ সকালেই বা এখানে আসিয়া হাজির হইলাম কেন ?