R R আমি ত দেখি ঠিক বিপৰীত ; এবং সে হিসাবে যা-কিছু ইহার কঠিন দুঃখ, যা-কিছু ত্যাগ, সে অভয়াকে করতে হয়েছে। রোহিণীবাবু যাঈ কেন করুন না, সমাজেব চক্ষে তিনি পুরুষমানুষ-এ অভ্রান্ত সত্যটা ভুলে যাচ্ছে কেন ? বাজলক্ষ্মী মাথা নাড়িঘা কহিল, আমি কিছুই তুলিনি। পুরুষমানুষ বলতে তুমি যে সুযোগ এবং সুবিধের ইঙ্গিত কবছ, সে ক্ষুদ্র এবং ইতিব পুরুষেবা জন্যে, রোহিণীবাবুৰ মত মানুষেবা জন্যে নয়। সখ ফুরালে, কিংবা হালে পানি না পেলে ফেলে পালাতে পারে, আবার ঘবে ফিবে মাথু-গণ্য ভদ্র জীবনযাত্ৰা নিৰ্বাহ কবতে পারে,-"এই ত বলচো ? পাবে বটে, কিন্তু সবাই পাবে ? তুমি পারো ? যে পাবে না, তার ভাবেব ওজনটা একবাব ভেবে দেখো দিকি । তার নিন্দিত জীবন ঘরের কোণে নিবালায় কাটাখাবি জো নেই, তাকে সংসারেব মাঝখানে দ্বন্দ্ব-যুদ্ধে নেমে আসতে হবে, অবিচার ও অপযশেৰ বোঝা একাকী নিঃশব্দে বইতে হবে, তার এ যন্ত মোহেক পত্রিী, তার ভাবী সন্তানের জননীকে বিকদ্ধ সমাজের সমস্ত অমৰ্যাদা ও অকল্যাণ থেকে বঁচিয়ে রাখতে হবে।-সে। কি সোজা দুঃখ তুমি মনে করা ? আবাব সকলের চেয়ে বড় দুঃখ এই যে, সে যে অনায়াসে এই দুঃখেৰ বোঝা নামিয়ে দিয়ে সবে যেতে পাবে, শাস্তু এই সর্বনেশে বিকট প্রলোভন থেকে অহোরাত্র আপনাকে আপনি বঁচিয়ে চলার গুরুভারও তাকেই বয়ে বেড়াতে হবে। দুঃখের মানদণ্ডে এই আত্মাৎসর্গেব সঙ্গে ওজন সমান রাখতে যে প্রেমের দরকার, পুরুষমানুষে আপনাব ভিতর থেকে যদি বার করতে না পারে, ত কোন মেয়েমানুষেরই সাধ্য নয়। তা পূৰ্ণ ক’রে দেয়। কথাটা এদিক হইতে কোনদিন এমন করিয়া ভাবি নাই। রোহিণীর সেই সাদাসিধা চুপচাপ ভাব, তার পরে অভয়া যখন তাহার স্বামীর ঘবে চলিয়া গেল, তখন তাহার সেই শান্ত মুখের উপর অপরিসীম বেদনা নিঃশব্দে বহন করিবার যে ছবি স্বচক্ষে দেখিয়াছিলাম, তাহাই চক্ষের পলকে রেখায় রেখায় আমার মনের মধ্যে ফুটিয়া উঠিল। কিন্তু মুখে বললাম,-চিঠিতে কিন্তু এক অভয়াব উদ্দেশেই পুষ্পাঞ্জলি পাঠিয়েছিলে।
পাতা:শ্রীকান্ত - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/২৯৫
অবয়ব