পাতা:শ্রীকান্ত - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৩৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্ৰীকান্ত St. এই নিৰ্বাক নিস্তব্ধতায় মগ্ন হইয়া যে উভয়ের কতক্ষণ কাটিয়াছিল, বোধ করি কেহই হিসাব করি নাই, সহসা দ্বারের বাহিরে মানুষের গলা, শুনিয়া দুজনেই চমকিয়া উঠিলাম এবং রাজলক্ষ্মী শয্যা ছাড়িয়া উঠিবার পূর্বেই ডাক্তারবাবু প্ৰসন্ন ঠাকুর্দাকে সঙ্গে লইয়া প্ৰবেশ করিলেন। কিন্তু সহসা তাহাব প্রতি দৃষ্টি পড়িতেই থমকিয়া দাড়াইলেন। ঠাকুর্দা যখন দিবানিদ্রা দিতেছিলেন, তখন খবরটা ভঁাহার কানে গিয়াছিল বটে, কে একজন বন্ধু কলিকাতা হইতে গাড়ি করিষা আমার কাছে আসিয়াছে, কিন্তু সে যে স্ত্রীলোক হইতে পারে, তাহা বোধ করি। কাহারও কল্পনায়ও আসে নাই। সেইজন্যই বোধ হয় এখন পৰ্যন্ত বাড়ির মেয়ের কেহ दांशिंद्भ अांप्न नांझे । ঠাকুর্দা অত্যন্ত বিচক্ষণ লোক। তিনি কিছুক্ষণ একদৃষ্টি রাজলক্ষ্মীর আনত মুখের প্রতি দৃষ্টিপাত করিয়া বলিলেন, মেয়েটি কে শ্ৰীকান্ত ? যেন চিনি-চিনি মনে হচ্ছে । ডাক্তারবাবুও প্ৰায় সঙ্গে সঙ্গেই বলিয়া উঠিলেন, ছোটখুড়ো, আমাৰও যেন মনে হচ্ছে একে কোথায় দেখেছি। ! আমি আড়চোখে চাহিয়া দেখিলাম, রাজলক্ষ্মীর সমস্ত মুখ যেন মড়ার মত ফ্যাকাশে হইয়া গেছে। সেই নিমেষেই কে যেন আমার বুকের মধ্যে বলিয়া উঠিল, শ্ৰীকান্ত, এই সর্বত্যাগী মেয়েট শুধু তোমার জন্যেই এই দুঃখ স্বেচ্ছায় মাথায় তুলিয়া লইয়াছে। একবার আমার সর্বন্দেহ কণ্টকিত হইয়া উঠিল, মনে মনে বলিলাম, আমার সত্যে কাজ নাই, আজ আমি মিথ্যাকেই মাথায় তুলিয়া লইব, এবং পরীক্ষণেই তাহার হাতের উপর একটু চাপ দিয়া কহিলাম, তুমি স্বামীর সেবা করতে এসেছ, তোমার লজ্জা কি রাজলক্ষ্মী । ঠাকুর্দা, ডাক্তারবাবুএদের প্রণাম কর । পলকের জন্য দুজনের চোখাচৌখি হইল, তাহার পরে সে উঠিয়া গিয়া ভূমিষ্ঠ হইয়া উভয়কে প্ৰণাম করিল।