পাতা:শ্রীকান্ত - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৪০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

{ শ্ৰীকান্ত "ইহা লক্ষ্য করিলেন না। বলিলেন, জপ আহিক সমস্ত সেরে ঘণ্টা-দুই পরে এসে দেখি সুনন্দ সেইখানে ঠিক তেমনি স্থির হয়ে বসে আছে। কোথাও একটা পা পৰ্যন্ত বাড়ায় নি। কর্তা কাছারি সেরে এখুনি এসে পড়বেন, ঠাকুরপো বিনুকে নিয়ে খামার দেখতে গেছে, তারও ফিরতে দেরি নেই, বিজয় নাইতে গেছে, এখুনি এসে ঠাকুরপূজায় বসবে-রাগের পরিসীমা রইল না, বললাম, তুই কি রান্নাঘরে আজ ঢুকবিনে ? ঐ বৰ্জ্জুগুত আঁতিবেটীর ছেড়া কথা নিয়েই সারাদিন বসে থাকবি ? সুনন্দা মুখ তুলে বলল, না দিদি, যে বিষয় আমাদের নয়, সে যদি ইতোমরা ফিরিয়ে না দাও ত আর আমি বান্নাঘরে ঢুকব না। ওই নাবালক ছেলেটার মুখের গ্ৰাস কেড়ে নিয়ে আমার স্বামী-পুত্ৰকেও খাওয়াতে পারব না, ঠাকুরের ভোগ রোধেও দিতে পারব না। এই ব’লে সে তার নিজের ঘরে চলে গেল । সুনন্দাকে আমি চিনতাম। সে যে মিথ্যা কথা বলে না, সে যে তার অধ্যাপক সন্ন্যাসী বাপের কাছে ছেলেবেলা থেকে শাস্ত্ৰ পড়েছে, তাও জানতাম, কিন্তু সে যে মেয়েমানুষ হয়েও এমন পাষাণ-কঠিন হ’তে পারবে, তাই কেবল তখনো জানতাম না। আমি তাড়াতাড়ি ভাত রাখতে গেলাম, পুরুষরা সব বাড়ী ফিরে এলেন-কৰ্ত্তার খাবার সময় সুনন্দা দরজার বাহিরে এসে দাঁড়াল! আমি দূর থেকে হাতজোড় ক'রে বললাম, সুনন্দ, একটু ক্ষমা দে। ওর খাওয়াটা হয়ে যাক । সে একটু অনুরোধও রাখলে না। গঙুষ ক'রে খেতে বসছিলেন, জিজ্ঞেস করলে তঁতিদের সম্পত্তি কি আপনি টাকা দিয়ে নিয়েছিলেন ? ঠাকুর ত কিছুই রেখে যান নি, এ ত আপনাদের মুখেই অনেকবার শুনেছি, তবে এত টাকা পেলেন কোথায় ? যে কখনও কথা কয় না, তার মুখে এ প্রশ্ন শুনে কৰ্ত্তা প্ৰথমে একেবারে হতবুদ্ধি হয়ে গেলেন, তারপর বললেন, এ-সব কথার মানে কি বৌমা ? সুনন্দা উত্তর দিলে, এর মানে যদি কেউ জানে ত সে আপনি। আজ আঁতি-বেী তার ছেলে নিয়ে এসেছিল, তার সমস্ত কথার পুনরাবৃত্তি করা আপনার কাছে রাহুল্য-কিছুই আপনার অজানা নেই। এ বিষয় যাৱ