পাতা:শ্রীকান্ত - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৪০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

AyrivU R ওই কয়খানা ভাঙা ঘরের মধ্যে কুমার-রঘু-শকুন্তলা-মেঘদূতের অধ্যাপনা চলে, হয়ত স্মৃতি ও ন্যায়ের মীমাংসা ও বিচার লইয়া ছাত্র-পরিবৃত এক নবীন অধ্যাপক মগ্ন হইয়া থাকেন । কে জানিবে উহারই মধ্যে এই বাঙলা দেশের এক তরুণী নারী ধম্মী ও ন্যায়ের মৰ্য্যাদা রাখিতে স্বেচ্ছায় অশেষ দুঃখ বহন করিতেছে। দক্ষিণের জানােলা দিয়া বাটির মধ্যে দৃষ্টি পড়ায় মনে হইল উঠানের উপর কি যেন একটা হইতেছে--রতন আপত্তি করিতেছে এবং রাজলক্ষ্মী তাহা খণ্ডন করিতেছে। সুতরাং কণ্ঠস্বরটা তাহারই কিছু প্ৰবল। আমি উঠিয়া বাহিরে আসিয়া দাড়াইতেই সে কিছু অপ্ৰতিভ হইয়া গেল। কহিল, ঘুম ভেঙে গেল বুঝি ? যাবেই ত । রতন, তুই গলাটা একটু খাটো কর বাবা, নইলে, আমি ত আব্ব পারি। নে ! এইপ্ৰকার অনুযোগ এবং অভিযোগে কেবল রতনই এক নয়, বাড়ীসুদ্ধ সকলেই আমরা অভ্যস্ত হইয়া গিয়াছিলাম, অতএব সেও যেমন চুপ করিয়া রহিল, আমিও তেমনি কথা কহিলাম না । দেখিলাম একটা বড় চাঙারীতে চাল-ডাল-ঘি-তেল প্ৰভৃতি এবং আর একটা ছোট পাত্রে এতজ্জাতীয় নানাবিধ ভোজ্যবস্তু সজ্জিত হইয়াছে ; মনে হইল। এইগুলির পরিমাণ ও তাহাদিগকে বহন করিবার শক্তি-সামৰ্থ্য প্রসঙ্গেই রতন প্ৰতিবাদ করিতেছিল। ঠিক তাই । রাজলক্ষ্মী আমাকে মধ্যস্থ মানিয়া বলিল, শোনা এর কথা । এই ক’টা চাল-ডাল আর বয়ে নিয়ে যেতে পারবে না। এ যে আমি নিয়ে যেতে পারি রতন ! এই বলিয়া সে হেঁট হইয়া স্বচ্ছন্দে বড়। বুড়িটা তুলিয়া ধরিল। বাস্তবিক ভার হিসাবে মানুষের পক্ষে, এমন কি রতনের পক্ষেও এগুলি বহিয়া লইয়া যাওয়া কঠিন ছিল না, কিন্তু কঠিন ছিল আর একটা কাজ । ইহাতে তাহার মৰ্য্যাদাহানি হইবে, কিন্তু মনিবের কাছে লজ্জায় এই কথাটাই সে স্বীকার করিতে পারিতেছিল না ; আমি তাহার মুখের পানে চাহিয়া অত্যন্ত সহজেই এ কথাটা বুঝিতে পারিলাম হাসিয়া কহিলাম, তোমার যথেষ্ট লোকজন আছে, প্ৰজারও অভাব নেইতাহাদের কাউকে দিয়ে পাঠিয়ে দাও, রতন না হয় খালি হাতে সঙ্গে যাক b