পাতা:শ্রীকান্ত - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৪১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

*歌 সংসারের অনেক দিনের দুশ্চিন্তা দূর ক’রে দিলেন, এতে প্ৰায় আমাদের পনের দিনের খাওয়া চলে যাবে ; কিন্তু সম্প্রতি ত অকাল চলেছে, ব্ৰত নিয়ম কিছুরই দিন নেই। ব্ৰাহ্মণী আশ্চৰ্য্য হয়ে তাই জিজ্ঞাসা করছিলেন রাজলক্ষ্মী সহস্যে কহিল, আপনার ব্ৰাহ্মণী কেবল বারব্ৰতের দিনক্ষণগুলোই শিখে রেখেছেন, কিন্তু প্ৰতিবেশীর তত্ত্ব নেবার কালাকাল বিচারটা আমার কাছে শিখে যেতে ব’লে দেবেন ! ব্ৰাহ্মণ কহিলেন, এত বড় সিধেটা কি তা হ’লে মাপ্রশ্নটা তিনি শেষ করিতে পারিলেন না, অথবা ইচ্ছা করিয়াই করিলেন না, কিন্তু আমি দাম্ভিক ব্ৰাহ্মণেব অনুক্ত বাক্যের মন্মটা সম্পূৰ্ণ উপলব্ধি করিলাম ; কিন্তু ভয় হইল আমারই মত না বুঝিয়া রাজলক্ষ্মী হয়ত একটা শক্ত কথা শুনিবে। লোকটির একদিকের পরিচয় এখনও অজ্ঞাত থাকিলেও, আর একদিকের পরিচয় ইতিপূবেব’ই পাইয়াছিলাম, সুতরাং এখন ইচ্ছা হইল না যে আমারই সম্মুখে আবার তাহার পুনরাবৃত্তি ঘটে। শুধু একটা সাহস এই ছিল যে কেহ কোনদিন মুখোমুখি রাজলক্ষ্মীকে নিরুত্তর করিয়া দিতে পারিত না । ঠিক তাহাই হইল। এই বিশ্রী প্রশ্নটাকেও সে অত্যন্ত সহজে পাশ কাটাইয়া গিয়া হাসিয়া বলিল, তর্কালঙ্কার মশাই, শুনেছি আপনার ব্ৰাহ্মণী ভারি রাগী মানুষ-বিনা নিমন্ত্রণে গিয়ে পড়লে হয়ত চটে যাবেন, না হ’লে এ কথার জবাব শুষ্ঠাকেই দিয়ে আসতাম । এতক্ষণে বুঝিলাম ইনিই যদুনাথ কুশারী । অধ্যাপক মানুষ, প্ৰিয়তমার মেজাজের উল্লেখে নিজের মেজাজ হারাইয়া ফেলিলেন, হাঃ হাঃ করিয়া উচ্চহাস্যে ঘর ভরিয়া প্ৰসন্ন চিত্তে বলিলেন, না মা, রাগী হবে কেন, নিতান্তই সোজা মানুষ। আমরা দরিদ্র, আপনি গেলে তা তার উপযুক্ত সম্মান করতে পারবে না, তিনিই আসবেন। একটু সময় পেলে আমিই তাকে সঙ্গে ক’রে নিয়ে আসব। রাজলক্ষ্মী জিজ্ঞাসা করিল, তর্কালঙ্কার মশাই, আপনার ছাত্ৰ কাটি ? কুশারী বলিলেন, পাঁচটি। এ দেশে বেশি ছাত্র ত পাবার যো নেই অধ্যাপনা কেবল নামমাত্ৰ ।