পাতা:শ্রীকান্ত - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৪১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

tro রাজলক্ষ্মী হঠাৎ আমাকে লক্ষ্য করিয়া কহিল, আমি ভেবেছিলুম সুনন্দার বুঝি বয়স হয়েছে। ও হরি! একেবারে ছেলেমানুষ । অজয় বোধ হয় তাহার গুরুদেবের হুকাতেই তামাক সাজিয়া আনিতেছিল, সুনন্দ তাহাকে দেখাইয়া বলিল, ছেলেমানুষ কি-বকম ! ওই অত বড় বড় ছেলে যার, তার বয়স বুঝি কম ! এই বলিয়া সে হাসিতে লাগিল। চমৎকার স্বচ্ছন্দ সরল হাসি । অজয় নিজে উনুন হইতে আগুন লাইবে কিনা জিজ্ঞাসা করায় পরিহাস করিয়া কহিল, কি জানি কি জাতের ছেলে বাবা তুমি, কাজ নেই তোমার উনুন ছুয়ে । আসল কথা, জ্বলন্ত অঙ্গাব চুল্পী হইতে উঠানো শক্ত বলিয়া সে আপনি গিয়া আগুন তুলিয়া কলিকাটাব উপরে রাখিয়া দিয়া অজয়ের হাতে দিল, এবং হাসিমুখে ফিরিয়া আসিয়া স্বস্থানে উপবেশন করিল। সাধাবণ পল্লারমণী সুলভ হাসি তামাস হইতে আরম্ভ করিয়া কথায় বাৰ্ত্তব্য আচবাণে কোনখানে বিশেষত্ব ধরিবার যো নাই, অথচ, ইতিমধ্যে যে সামান্য পরিচয়টুকু তাহার পাইয়াছি তাহা কতই না অসামান্য ! এই অসাধারণতার হেতুটা পরীক্ষণেই আমাদের দুজনের কাছেই পরিস্ফুট হইয়া উঠিল । অজয় আমাব হাতে হুকাটা দিয়া বলিল, মা, ওটা তা হ’লে রেখে দি ? সুনন্দ ইঙ্গিতে সায় দেওয়ায় তাহার দৃষ্টি অনুসরণ করিয়া দেখিলাম, আমারই অদূরে একখণ্ড কাঠের পিাড়ির উপর মস্ত মোটা একটা পুথি এলোমেলো ভাবে খোলা পড়িয়া আছে। এতক্ষণ কেহই উহা দেখি নাই। অজয় তাহার পাতাগুলি গুছাইয়া তুলিতে তুলিতে ক্ষুঃস্বরে কহিল মা, 'উৎপত্তি প্ৰকারণটা’ ত আজো শেষ হ’ল না, কবে আর হবে । ও আর হবেই না । রাজলক্ষ্মী জিজ্ঞাসা করিল, ওটা কিসের পুথি অজয় ? যোগবাশিষ্ঠ । তোমার মা মুড়ি ভাজছিলেন আর তুমি শোনাচ্ছিলে ? না, আমি মা’র কাছে পড়ি । অজয়ের এই সরল ও সংক্ষিপ্ত উত্তরে সুনন্দ হঠাৎ যেন লজ্জায় রাঙা