শ্ৰীকান্ত Spr তা জানি, বলিয়া তিনি জানালার উপর হইতে একটা আসন টানিয়া লইয়া নিজেই মেঝের উপর পাতিয়া লইয়া উপবেশন করিলেন, কহিলেন, কেবল সন্ধ্যা কেন, ফিরে আসতে ত প্ৰায় রাত হয়েই যাবে। লোকের মুখে মুখে শুনিয়াছিলাম ধনিগৃহিণী বলিয়া ইনি অতিশয় দাম্ভিক । কাহারও বাড়ী বড় একটা যান না । এ বাড়ীর সম্বন্ধেও তঁহার ব্যবহার অনেকটা এইরূপ ; অন্ততঃ, এতদিন ঘনিষ্ঠত করিতে ঔৎসুক্য প্ৰকাশ করেন নাই। ইতিপূবেবী মাত্র বার-দুই আসিয়াছেন। মনিববাড়ী বলিয়া একবার নিজেই আসিয়াছিলেন, এবং আর একবার নিমন্ত্রণ রাখিতে উপস্থিত হইয়াছিলেন ; কিন্তু কেন যে আজ অকস্মাৎ স্বেচ্ছায় আগমন করিলেন এবং বাটীতে কেহ নাই জানিয়াও- আমি ভাবিয়া পাইলাম না । আসন গ্ৰহণ করিয়া কহিলেন, আজকাল ছোটগিন্নার সঙ্গে ত একেবারে ५éक-ड्यू ! না জানিয়া তিনি একটা ব্যথার স্থানেই আঘাত করিলেন, তথাপি ধীরে ধীরে বলিলাম, ই, প্রায়ই ওখানে যান বটে। কুশারীগৃহিণী কহিলেন, প্ৰায় ? রোজ, বোজ ! প্ৰত্যহ । কিন্তু ছোটগিন্নী কি কখনো আসে ? একটি দিনও না । মন্নিবের মান রাখবে সুনন্দ সে মেয়েই নয়। এই বলিয়া তিনি আমার মুখের প্রতি চাহিলেন । আমি একজনের নিত্য । যাওয়ার কথাই কেবল ভাবিয়াছি, কিন্তু আর একজনেব আসার কথা মনেও করি নাই ; সুতরাং তঁহার কথায় হঠাৎ একটু যেন ধাক্কা লাগিল ; কিন্তু ইহার উত্তর আর কি দিব ? শুধু মনে হইল ইহার আসার উদ্দেশ্যটা কিছু পরিষ্কার হইয়াছে, এবং একবার এমনও মনে হইল যে মিথ্যা-সঙ্কোচ ও চক্ষুলজ্জা পরিত্যাগ করিয়া বলি, আমি নিতান্তই নিরুপায়, অতএব এই অক্ষম ব্যক্তিটিকে শত্রুপক্ষের বিরুদ্ধে উত্তেজিত করিয়া কোন লাভ নাই । বলিলে কি হইত জানি নাই। কিন্তু না বলার ফলে দেখিলাম সমস্ত উত্তাপ ও উত্তেজনা ভঁাহার চক্ষের পলকে প্ৰদীপ্ত হইয়া উঠিল, এবং কবে, কাহার কি ঘটিয়াছিল, এবং কি করিয়া তাহা দম্ভবপর হইয়াছিল, ইহারই বিস্তৃত ব্যাখ্যায় তাহার শ্বশুরকুলের
পাতা:শ্রীকান্ত - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৪৩৪
অবয়ব