পাতা:শ্রীকান্ত - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৪৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্ৰীকান্ত R আনন্দ প্রশ্ন করিল, মাথা নাড়লেন যে বড় ? রাজলক্ষ্মী প্ৰথমে একটুখানি হাসিবার চেষ্টা করিল, পরে স্নিগ্ধ মধুরকণ্ঠে কহিল, দেশের দুৰ্দশা যে কত বড় তা আমিও জানি আনন্দ ; কিন্তু তোমার একলার চেষ্টায় আর কি হবে ভাই ? আমাকে দেখাইয়া কহিল, আবার উনি যাবেন সাহায্য করতে ? তবেই হয়েছে। তা হ’লে আমার মত ওঁর সেবাতেই তোমার দিন কাটবে, আর কারও কিছু করতে হবে না। এই বলিয়া সে হাসিল । তাহার হাসি দেখিয়া আনন্দ নিজে ও হাসিয়া ফেলিয়া কহিল, কাজ নেই দিদি ওঁকে নিয়ে, থাকুন উনি চিরকাল আপনার চোখের মণি হয়ে : ' কিন্তু একলা-দোকলার কথা এ নয় ! একলা মানুষেরও আন্তরিক ইচ্ছাশক্তি এত বড় যে তার পরিমাণ হয় না । ঠিক বানন দেবের পায়ের মত । বাইরে থেকে সে দেখতে ছোট, কিন্তু সেই ক্ষুদ্র পদতলািট্রকু প্রসারিত হ’লে বিশ্ব আচ্ছন্ন ক'রে দেয় । চাহিয়া দেখিলাম, বাননদেবের উপমায় রাজলক্ষ্মীর চিত্ত কোমল হইয়াছে, কিন্তু প্ৰত্যুত্তরে সে কিছুই কহিল না। আনন্দ বলিতে লাগিল, হয়ত আপনার কথাই ঠিক, বিশেষ কিছু করতে আমি পারি। নে ; কিন্তু একটা কাজ করি সাধ্যমত দুঃখীর দুঃখের অংশ আমি নিই দিদি । রাজলক্ষ্মী অধিকতর আর্দ্র হইয়া বলিল, সে আমি জানি আনন্দ } তোমাকে দেখে প্ৰথম দিনই আমি তা বুঝেছিলাম। আনন্দ বোধহয় এ কথায় কান দিল না, সে নিজেব কথার সূত্র ধরিয়া কহিতে লাগিল, আপনাদের মত আমারও অভাব কিছুই ছিল না । বাবার যা আছে, বিপুল, সুখে দিন কাটাবার পক্ষেও সে বেশি। আমার কিন্তু তাতে প্রয়োজন নেই। এই দুঃখীর দেশে সুখ-ভোগের লালসাটাও যদি এ জীবনে ঠেকিয়ে রাখতে পারি। সেই আমার ঢেরা। রতন আসিয়া জানাইল, পাচক বলিতেছে খাবার প্রস্তুত । রাজলক্ষ্মী তাহাকে ঠাই করিবার আদেশ দিয়া আমাদের কহিল, আজি তোমরা একটু সকাল-সকাল সেরে নাও আনন্দ, আমি বড় ক্লান্ত ।