পাতা:শ্রীকান্ত - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৫০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

CF সন্ন্যাসী বজানন্দ তাহার ঔষধের বাক্স ও ক্যাম্বিসের ব্যাগ লইয়া যেদিন বাহির হইয়া গেল সেদিন শুধু যে সে এ-বাড়ীর সমস্ত আনন্দচুকু ছাকিয়া লইয়া গেল তাই নয়, আমার মনে হইল যেন সে সেই শূন্য স্থানটুকু ছিদ্রহীন নিরানন্দ দিয়া ভরিয়া দিয়া গেল। ঘন শৈবাল-পরিব্যাপ্ত জলাশয়ের যে জলটুকু তাহার অবিশ্ৰান্ত চাঞ্চল্যের অভিঘাতে আবৰ্জনমুক্ত ছিল, সে যেন তাহার অন্তৰ্দ্ধানের সঙ্গে সঙ্গেই লেপিয়া একাকার হইতে চলিল । তবুও ছয়-সাতদিন কাটিয়া গেল। রাজলক্ষ্মী প্ৰায় সারাদিনই বাড়ী থাকে না । কোথায় যায়, কি করে জানি না, জিজ্ঞাসাও করি না । দিনান্তে একবার যখন দেখা হয় তখন হয় সে অনমনস্ক, না হয় বড়কুশারী ঠাকুর সঙ্গে থাকেন, কাজের কথা চলে। একলা ঘরের মধ্যে, যে আনন্দ আমার কেহ নয়, তাকেই বার বার মনে পড়ে। যনে হয়। হঠাৎ যদি সে আবার আসিয়া পড়ে! শুধু যে কেবল আমিই খুনী হই তাই নয়, ওই যে রাজলক্ষ্মী বারান্দার ওপারে বসিয়া প্ৰদীপের আলোকে কি একটা করিবার চেষ্টা করিতেছে, আমি জানি, সেও তেমনি খুনী হইয়া উঠে এমনই বটে! একদিন যাহাঁদের উন্মুখ যুগ্ম-হৃদয় বাহিরের সর্ববিধ সংস্রব পরিহার করিয়া একান্ত সম্মিলনের আকাঙ্খায় ব্যাকুল হইয়া থাকিত, আজ ভাঙ্গনের দিনে দেই বাহিরটাকেই আমাদের কত বড়ই না প্ৰয়োজন । মনে হয়, যে-কেহ হােক, একবার মাঝখানে আসিয়া দাড়াইলে যেন হাঁফ ছাড়িয়া বঁচি । এমনি করিয়া দিন যখন আর কাটিতে চাহে না, তখন হঠাৎ একসময়ে রতন আসিয়া সম্মুখে উপস্থিত হইল ? মুখের হাসি সে আর চাপিতে পারে না। রাজলক্ষ্মী গৃহে ছিল না, অতএব তাহার। ভীত হইবারও আবশ্যক ছিল না, তথাপি সে সাবধানে চারিদিকে দৃষ্টিপাত করিয়া আস্তে আক্তে বলিল, শোনেন নি বুঝি ? কহিলাম, না। ’