পাতা:শ্রীকান্ত - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৬০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

-काछ s একটা ডাহুক নদীর কলমীদলের উপরে বসিয়া ততোধিক কঠিন কণ্ঠে ইহাদের বার বার তিরস্কার করিয়াও স্তব্ধ করিতে পারে নাই। ভাগ্য ভাল যে এদেশে ময়ুর মিলে না, নহিলে উৎসবের গানের আসরে তাহারা আসিয়া যোগ দিলে আর মানুষ টিকিতে পারিত না । সে যাই হোক, দিনের উৎপাত এখনো আরম্ভ হয় নাই, হয়ত আর একটু নির্বিবঘ্নে ঘুমাইতে পারিতাম, কিন্তু স্মরণ হইল গতরাত্রির সঙ্কল্পের কথা ; কিন্তু গা-ঢাকা দিয়া সরিয়া পড়িবারও যো নেইপ্রহরীর সতর্কতায় মতলব ফাসিয়া গেল । রাগ করিয়া বলিলাম, আমি রাইও নই, আমার বিছানায় শ্যামও নেই-দুপুর রাতে ঘুম ভাঙ্গানোর কি দরকার ছিল বলে তা ? বৈষ্ণবী কহিল, বাত কোথায় গোঁসাই, তোমার যে আজ ভোরেব গাড়ীতে কলকাতা যাবার কথা। মুখ হাত ধুয়ে এসো, আমি চা তৈৰী করে আনি গে ; কিন্তু স্নান ক’রো না যেন । অভ্যাস নেই, অসুখ করতে পারে। বলিলাম, তা পারে। সকালের গাড়ীতে যখন হোক আমি যাবো, কিন্তু তোমাব এত উৎসাহ কেন বলে তো ? সে কহিল, আর কেহ ওঠার আগে আমি যে তোমাকে বড় রাস্তা পৰ্য্যন্ত পৌছে দিয়ে আসতে চাই গোঁসাই। স্পষ্ট করিয়া তাহার মুখ দেখা গেল না, কিন্তু ছড়ানো চুলোয় পানে চাহিয়া ঘরের এই অত্যন্ত্র আলোকেও বুঝা গেল সেগুলি ভিজ-স্নান সারিয়া বৈষ্ণবী প্ৰস্তুত হইয়া লইয়াছে। জিজ্ঞাসা করিলাম, আমাকে পৌছে দিয়ে আশ্রমেই আবার ফিরে আসবে তা ? বৈষ্ণবী বলিল, হঁহা । সেই ছোট টাকার থলিটি সে বিছানায় রাখিয়া দিয়া কহিল, এই তোমার ব্যাগ। এটা পথে সাবধানে রেখে-টাকাগুলো একবার দেখে নাও ।