পাতা:শ্রীকান্ত - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৬১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ਵ ፭bም না, বাধা দিবে না, কিন্তু কিছুতেই পা-ও চলিল না, মুখেও একটা কথা আসিল না, যেমন চলিতেছিলাম তেমনি ধীরে ধীরে নীরবে: বনের বাহিরে আসিয়া পৌছিলাম। পথের ধারে বেড়া দিয়া ঘেরা আশ্রমের ফুলের বাগান, ঠাকুরেব নিত্যপূজার জোগান দেয়। খোলা জায়গায় অন্ধকার আর নাই, কিন্তু ফর্সাও তেমন হয় নাই। তথাপি দেখা গেল অজস্র ফুটন্ত মল্লিকায সমস্ত বাগানটা যেন সাদা হইয়া আছে। সামনের পাতাঝরা ন্যাড়া চাপাগাছটায় ফুল নাই। কিন্তু কাছাকাছি কোথাও বোধ করি। অসময়ে প্ৰস্ফুটিত গোটকয়েক রজনীগন্ধার মধুর গন্ধে সে ত্রুটি পূর্ণ হইয়াছে। আর সবচেয়ে মানাইয়াছে মাঝখানটায়। নিশান্তের এই ঝাপসা আলোতেও চেনা যায় শাখায়-পাতায় জড়ােজডি করিয়া গোটা-পাঁচ-ছয় স্থলপদ্মের গাছ-ফুলের সংখ্যা নাই-বিকশিত সহস্র আরক্ত আখি মেলিয়া বাগানের সকল দিকে তাহারা চাহিয়া আছে। কখনো এত প্ৰত্যুষে শয্যা ছাড়িয়া উঠি না, এমন সময়টা চিরদিন নিদ্রাচ্ছন্ন জড়তায় অচেতনে কাটিয়া যায়-আজ কি যে ভালো লাগিল তাহা বলিতে পারি না। পূর্বে রক্তিম দিগন্তে জ্যোতিৰ্ম্ময়ের আভাস পাইতেছি, নিঃশব্দ মহিমায় সকল আকাশ শান্ত হইয়া আছে, আর ঐ লতায়-পাতায় শোভায়-সৌরভে ফুলে ফুলে পরিব্যাপ্ত সম্মুখের উপবন --সমস্ত মিলিয়া এ যেন নিঃশেষিত রাত্রির বাক্যহীন বিদায়ের অশ্রুরুদ্ধ ভাষা। করুণায়, মমতায় ও অযাচিত দাক্ষিণ্যে সমস্ত অন্তরটা আমার চক্ষুর নিমিষে পরিপূর্ণ হইয়া উঠিল—সহসা বলিয়া ফেলিলাম, কমললতা, তুমি অনেক দুঃখ অনেক ব্যথা পেয়েছে, প্রার্থনা করি। এবার যেন সুখী হও । বৈষ্ণবী সাজিটা চাপ-ডালে ঝুলাইয়া আগলের বাঁধন খুলিতেছিল, আশ্চৰ্য্য হইয়া ফিরিয়া চাহিল-হঠাৎ তোমার-ইিঞ্জলো কি গোঁসাই ?