পাতা:শ্রীকান্ত - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৭২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্ৰীকান্ত Reis আজ তাহদের প্রয়োজন গিয়াছে ফুরাইয়া, তথাপি কখনো কাজে লাগার আশায় কি জানি সেগুলি সে যত্নে তুলিয়া রাখিয়াছে কিনা। জানি সে পালাই পালাই করিতেছে। হেতু জানি না, তবু মনে সন্দেহ নাই মুরারিপুর আশ্রমে দিন তাহার প্রতিদিন সংক্ষিপ্ত হইয়া আসিতেছে। হয়ত, একদিন এই খবরটাই অকস্মাৎ আসিয়া পৌঁছিবে। নিরাশ্রয়, নিঃসম্বল, পথে পথে সে ভিক্ষা করিয়া ফিরিতেছে মনে করিলেই চোখে জল আসিয়া পড়ে। দিশেহারা মন সান্থনার আশায় ফিরিয়া চাহে বাজলক্ষ্মীর পানে। সকলেব সকল শুভ-চিন্তায় অবিশ্রাম কৰ্ম্মে নিযুক্ত-কল্যাণ যেন তাহার দুই হাতের দশ অঙ্গুলি দিয়া অজস্রধারায় ঝরিয়া পডিতেছে। সুপ্ৰসন্ন মুখে শান্তি ও পরিতৃপ্তির স্নিগ্ধ ছায়া ; করুণায় মমতায় হৃদয়-যমুনা কূলে কুলে পূর্ণ-নিরবচ্ছিন্ন প্রেমের সর্বব্যাপী মহিমায় আমার চিত্তলোকে সে যে-আসনে অধিষ্ঠিত, তাহার তুলনা করিতে পারি। এমন কিছুই জানি i বিদুষী সুনন্দার দুনিবাৰ্য্য প্রভাব স্বল্পকালের জন্যও যে তাহাকে বিভ্রান্ত করিয়াছিল, ইহারই দুঃসহ পরিতাপে পুনরায় আপন সত্তাকে সে ফিরিয়া পাইয়াছে। একটা কথা সে আজও আমাকে কানে কানে বলে, তুমি কম নও গো, কম নও। তোমার চলে যাবার পথ বেয়ে সৰ্ব্বস্ব যে আমার চোখের পলকে ছুটে পালাবে, কে জানতো, বলে ? উঃ-সে কি ভয়ঙ্কর ব্যাপার, ভাবলেও ভয় হয় সে দিনগুলো আমার কেটেছিল কি ক’রে ? দম বন্ধ হয়ে ম’রে যাইনি এই • আমি উত্তর দিতে পারি না, শুধু নীরবে চাহিয়া থাকি। আমার সম্বন্ধে আর তাহার ক্রটি ধরিবার জো নাই। শতকৰ্ম্মের মধ্যে শতবার অলক্ষ্যে আসিয়া দেখিয়া যায়। কখনো হঠাৎ আসিয়া কাছে বসে, হাতের বইটা সরাইয়া দিয়া বলে, চোখ বুজে একটুখানি শুয়ে পড়তো, আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিই। অতো পড়লে চোখ ব্যথা করবে। যে ।