পাতা:শ্রীকান্ত - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

w 3ArqVU জন্যে চোখের জল ফেলেন। বলিতে বলিতেই তঁহার দু'চোখ দিয়া করে। ঝর করিয়া জল পড়িতে লাগিল । বেলা আটটা-নয়টার সময় আমরা বাটীতে ফিরিতে উদ্যত হইলে, সেদিন তিনি সঙ্গে সঙ্গে রাস্তা পৰ্যন্ত আসিলেন। যাইবার সময় ইন্দ্রের একটা হাত ধরিয়া বলিলেন, ইন্দ্রনাথ, শ্ৰীকান্তকে আশীৰ্বাদ করলুম। বটে, কিন্তু তোমাকে আশীৰ্বাদ করি সে সাহস আমার হয় না। তুমি মানুষের আশীৰ্বাদের বাইরে । তবে ভগবানের শ্ৰীচরণে তোমাকে মনে মনে আজ সঁপে দিলুম। তিনি তোমাকে যেন আপনার ক’রে নেন। ইন্দ্ৰকে তিনি চিনিতে পারিয়াছিলেন । তঁহার বাধা দেওয়া সত্ত্বেও ইন্দ্ৰ জোর করিয়া তাহার দুই পায়ের ধূলা মাথায় লইয়া ভঁাহাকে প্ৰণাম করিল, কঁাদ-কঁাদ হইয়া বলিল, দিদি, এ জঙ্গলে তোমাকে একলা ফেলে রেখে যেতে আমার কিছুতেই মন সরাচে না। আমার কি জানি কেন কেবলি মনে হচ্ছে, তোমাকে আর দেখতে পাব না । দিদি জবাব দিলেন না। সহসা মুখ ফিরাইয়া চোখ মুছিতে মুহিতে সেই বনপথ ধরিয়া তাহার শোকাচ্ছন্ন শূন্য কুটীরে ফিরিয়া গেলেন। যতক্ষণ দেখা গেল তঁহাকে দাড়াইয়া দেখিলাম । কিন্তু একটিবারও আর তিনি ফিরিয়া চাহিলেন না-তেমনি মাথা নত করিয়া একভাবে দৃষ্টির বাহিরে মিলাইয়া গেলেন । অথচ কেন যে তিনি ফিরিয়া চাহিলেন না, তাহা দু’জনেই মনে মনে অনুভব করিলাম । তিনদিন পরে স্কুলের ছুটির পর বাহির হইয়া দেখি, ইন্দ্ৰ গেটের বাহিরে দাড়াইয়া আছে। তাহার মুখ অত্যন্ত শুষ্ক, পায়ে জুতা নাই-হাঁটু পৰ্যন্ত ধূলায় ভরা। এই অত্যন্ত দীন চেহারা দেখিয়া ভয় পাইয়া গেলাম। বড়লোকের ছেলে, বাহিরে সে একটু বিশেষ বাবু। এমন অবস্থা তাহার আমি তো দেখিই নাই-বোধ করি, আর কেহও দেখে নাই। ইশারা করিয়া মাঠের দিকে আমাকে ডাকিয়া লইয়া ইন্দ্ৰ বলিল, দিদি নেইকোথায় চলে গেছেন। আমার মুখের প্রতিও। আর সে চাহিয়া দেখিল না।