পাতা:শ্রীগৌর-উপদেশামৃত (প্রথম খণ্ড) -মধুসূদন দাস অধিকারী.pdf/৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

p শ্ৰীগৌর উপদেশাশ্বত । মুক্তি প্ৰদান করিতে চাহিলেও তাহা গ্ৰহণ করেন না, কেবল কৃষ্ণ সেবার বাধক বলিয়া । স্বৰ্গাদি মায়িক ভোগ ও সাযুজ্য মুক্তি, কালের দ্বারা আণ্ড বিনাশ প্রাপ্ত হয়। বিশেষতঃ সাযুজ্যমুক্তি দ্বারা জীবের সত্তাকাল অপরাধ কবলে পতিত হয়। এজন্য ভক্তগণ সাযুজ্যকে নরক বলিয়া কীৰ্ত্তন করেন। যথা শ্ৰীচৈতন্য চন্দ্ৰামৃতে “কৈবল্যং নরকায়তে ত্ৰিদশপুরাকাশপুষ্পায়তে। অর্থাৎ কক্ষ্মীর স্বৰ্গভোগ আকাশ-কুসুম সদৃশ এবং জ্ঞানীর সাযুজ্য মুক্তি নরকের তুল্য। তাই কোন সাধক বলিয়াছেন -“চিনি হওয়ার চেয়ে চিনি খাওয়া ভাল।”ব্ৰহ্মবৈবৰ্ত্তপুরাণে মুক্তি দ্বিবিধা কথিত আছে। যথা হরিভক্তি স্বরূপাঞ্চ মুক্তিং বাঞ্ছন্তি বৈষ্ণবাঃ।। অন্যে নিৰ্ব্বাণীরূপাঞ্চ মুক্তি মিচ্ছন্তি সাধবাঃ ॥ অর্থাৎ হরিভক্তি ও নিৰ্ব্বাণ ভেদে মুক্তি দ্বিবিধা। নিৰ্ব্বাণ অপেক্ষা হরিভক্তিই যে শ্রেষ্ঠতম মুক্তি তাহা ইতঃপূর্বে সংক্ষেপে উক্ত হইয়াছে। অতএব আত্যন্তিক দুঃখ নিবৃত্তিই মুক্তির প্রকৃত লক্ষণ নহে। শ্ৰীভগবান্নাম কীৰ্ত্তনরূপ ভক্তির একাঙ্গভজনই জীবের আত্যন্তিক দুঃখ নিবৃত্তি হয়, পরন্তু পরম পুরুষাৰ্থ প্ৰেম পৰ্য্যন্ত লাভ হইয়া থাকে। ভক্ত যখন শ্ৰীভগবানের ভাবে বিভোর হইয়া তাহার নাম কীৰ্ত্তন করিতে থাকেন তখন পাপ দুঃখাদি আপনা হইতেই ক্ষয় পায় এবং মুক্তিও আপনা হইতে সংসিদ্ধ হয়। পাপাদি ক্ষয় ও মুক্তি নামের আনুষঙ্গিক ফল ।- " “আনুষঙ্গিক ফল নামের মুক্তিপাপনাশ। তাহার দৃষ্টান্ত যৈছে সুৰ্য্যের প্রকাশ ॥” চৈঃ চিঃ। অতএব ভক্ত এই আনুষঙ্গিক ফলের জন্য আকুল হইবেন কেন ? আনুষঙ্গিক ফল তো জীবের চরম লক্ষ্য হইতে পারেনা। সুতরাং আত্যন্তিক দুঃখ নাশ মুক্তির শ্রেষ্ঠ লক্ষণ নহে-শ্ৰীহরিভক্তিলাভই জীবের শ্রেষ্ঠমুক্তি। বোধ হয়, এইজন্যই প্ৰেমভক্তির মহোদধি শ্ৰীগৌরাঙ্গ, গদাধরকে ব্যাখ্যা করিতে জানিলে না বলিয়া দুষিলেন। এত বড় তার্কিক কে যিনি স্বয়ং সরস্বতি-পতিকে বিচারে পরাস্ত করিবেন ? প্ৰভু পূৰ্ব্বোক্ত মুক্তিলক্ষণ সম্বন্ধে নৈয়ায়িক মতকে নানারূপে দুষিলেন। কিন্তু কিরূপ প্রমাণাদি প্রয়োগে দুষিলেন তাহার মীমাংসা করা এ শাস্ত্ৰজ্ঞান হীন অজ্ঞ জীবাধ্যমের সাধ্যাতীত। সুপণ্ডিত ভাবুক ভক্তগণই উহার বিচার মীমাংসার প্রকৃত অধিকারী।