পাতা:শ্রীমদভগবদগীতা - দেবেদ্রবিজয় বসু.pdf/২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

শ্রীমন্তগবদগীতা।


গীতাশাস্ত্র দুর্ব্বোধ্য। গীতার ন্যায় এমন কঠিন-এমন দুর্ব্বোধ্য গ্রন্থ বুঝি আর নাই। ইহার ক্ষুদ্র আয়তনমধ্যে একাধারে সমুদায় ধর্ম্মতত্ত্ব, সমুদায় দাশনিক তত্ত্ব, সমুদায় উপনিষদের সার তত্ত্ব সংক্ষেপে-প্রায়ষ্ট সুত্রাকারে কি বৃত্তিরূপে গ্রথিত হইয়াছে। গীতামাহাষ্ম্যে আছে-
"সর্ব্বপনিষদো গাবো দোগ্ধা গোপালনন্দন। পার্থো বৎসঃ সুধীর্ভোক্তা দুগ্ধং গীতামৃতং মহৎ॥”
যাঁহারা সুধী-প্রকৃত পণ্ডিত, যাঁহারা সর্ব্বদর্শনশাস্ত্রের সর্বধর্ম্মশাস্ত্রের পারদর্শী, তাঁহাদের নিকট গীতার অর্থ সুবোধ্য হইতে পারে, তাহারা মহৎ গীতামৃত পান করিয়া কৃতার্থ হহঁতে পারেন। কিন্তু অন্যের পক্ষে গীতার অর্থ গ্রহণ দুঃসাধ্য-একরূপ অসাধ্যও বলা যায়। যাঁহারা অতি বড় পণ্ডিত, তাঁহাদের মধ্যে ও গীতার অর্থ সম্বন্ধে মতভেদ দেখিতে পাওয়া যায়। যখন শঙ্করাচার্য্য, রামানুজ, বলদেব প্রভৃতি মহাত্মা পণ্ডিতগণ গীতার অনেক স্থলে বিভিন্নরূপ অর্থ করিয়াছেন-দেখিতে পাওয়া যায়, তখন গীতার প্রকৃত অর্থ বুঝিবার চেষ্টায় একরূপ হতাশ হইতে হয়। অবশ্য যাঁহারা শঙ্করের মতাবলম্বী, তাঁহারা শঙ্করের অর্থ গ্রহণ করতে পরিলে সন্তুষ্ট থাকিতে পারেন। সেইরূপ যাঁহারা রামানুজ প্রভৃতি বৈষ্ণব পণ্ডিতগণের অনুবর্ত্তী, তাঁহারা রামানুজ প্রভৃতি আচার্য্যগণের অর্থ গ্রহণ করিয়া পরিতৃপ্ত থাকেন। কিন্তু যাঁহারা প্রকৃত তত্ত্বজিজ্ঞাসু, কোন মতবিশেষের পক্ষপাতী বা অন্ধের ন্যায় অনুবর্ত্তী নহেন,—প্রকৃত সিদ্ধান্ত কি, তাহা নিরপেক্ষভাবে জানিতে চাহেন, তাঁহারা ব্যাখ্যাকারগণের এই পরস্পর-বিরোধী অর্থের মধ্যে কোন কোন্‌ অর্থ গ্রাহ্য, কোন অর্থ ত্যাজ্য, তাহা সহজে স্থির করিতে পারেন না। অনেকে হয়ত গীতার প্রকৃত অর্থগ্রহণের চেষ্টায় একরূপ হতাশ হইয়া পড়েন।
যাঁহারা গীতার কোন ভাষ্য বা ব্যাখ্যা না পড়িয়া, নিজের জ্ঞানবুদ্ধির