পাতা:শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা - প্রসন্নকুমার শাস্ত্রী ভট্টাচার্য্য.pdf/২২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্ৰীমদ্ভগবদগীতা " 8ܔ গয়োৰ্ব্বিধানাদযুগপদুভিয়ানুষ্ঠানসম্ভব।াৎ এতয়োঃ কৰ্ম্মতত্ত্যাগায়োম্মধ্যে যাদেকং শ্ৰেয়ঃ প্রশস্যতািরং মন্যসে কৰ্ম্ম বা তত্ত্যাগং বা তন্মে ক্ৰাহি সুনিশ্চিতং তব মত।মনুষ্ঠানায় ৷ ১ ৷৷ ং, অং। অর্জন বলিলেন, ভগবন! আপনি কৰ্ম্মসংন্যাস আর কৰ্ম্মযোগ এতদুভয়কেই জ্ঞানের কারণও বলিয়া নির্দেশ করিলেন, এতদ্বারা আমি অত্যন্ত সন্দিহান হইয়াছি, অতএব এতদুভয়ের মধ্যে শ্রেয়ঙ্কর কি, তাহা আমাকে নিশ্চয় করিয়া বলুন ( ক ) ৷ ১ ৷৷ (ক) কৰ্ম্মের সংন্যাস বা কৰ্ম্মপরিত্যাগ করা দুই প্রকারে সম্ভব হইতে পারে, ( ১ম ) যখন জীবাত্মা আমার পরমাত্মার অভেদজ্ঞান উৎপন্ন হয়, তখন এই ত্ৰিভুবন মধ্যে একমাত্ৰ ব্ৰহ্ম ব্যতীত আর কিছুই দেখিতে পাওয়া যায় না, রজুতে সর্পভ্ৰম ছুটিয়া গেলে, -যেমন আর সেই সৰ্প জ্ঞান হয় না, কেবলমাত্র রজ্জ্বৱই জ্ঞান হইয়া থাকে ; সেইরূপ, একমাত্ৰ ব্ৰহ্মপদার্থেই যে এই মায়াময় সচরাচর জগতের ভ্ৰমজ্ঞান হইতেছে, এই ভ্ৰম ছুটিয়া গেলে তখন এই জগতের জ্ঞান না হইয়া, কেবলমাত্ৰ ব্ৰহ্মেরই জ্ঞান হয়, তখন কৰ্ত্তা, কৰ্ম্ম, ক্রিয়া, কারণ ইত্যাদি কিছুই আর অনুভবে আসে না ; সুতরাং কোন প্ৰকার কৰ্ম্ম করাও সম্ভবে না, এবং আত্মজ্ঞানস্বরূপ ফল উৎপন্ন হইলে, আর কৰ্ম্ম করার কোন প্ৰয়োজনও থাকে না ; অতএব তখন আপনা হইতেই সকল প্ৰকার কৰ্ম্ম করা বন্ধ হইয়া যায়, সুতরাং অগত্যাই কৰ্ম্মসংন্যাস বা কৰ্ম্ম পরিত্যাগ হইল। দ্বিতীয়তঃ, নিষ্কামভাবে নিত্যনৈমিত্তিক কৰ্ম্মের অনুষ্ঠান করিতে করিতে, যখন চিত্ত বিশুদ্ধ হইয়া যায়, তমোগুণ এবং রজোগুণ নিঃশেষে বিদূরিত হইয়া, পরিপূর্ণ সত্ত্বগুণের উদ্রেক হইলে, চিত্ত যখন নিতান্ত নিৰ্ম্মলভােব গ্ৰহণ করে, কাম, ক্ৰোধ, ঈর্ষা, অসূয়া, অভিমান, কপটতা প্ৰভৃতি বৃত্তিগুলি যখন এককালে নিরক্ত হইয়া যায়, এদিকে শম, দম, উপর তি, তিতিক্ষা, শ্ৰদ্ধা, বিবেক, বৈরাগ্য ও ঔদাসীন্যাদি সাত্ত্বিক শক্তিগুলি যখন পূর্ণমাত্রায় বিকসিত হয়, তখন নিত্যনৈমিত্তিক সমস্ত কৰ্ম্মের ফল সাধিত হইয়া যায়, সুতরাং কৰ্ম্মানুষ্ঠান করার প্রয়োজন থাকে না ; কেন না। উক্তরূপ চিত্তশুদ্ধিই সমস্ত কৰ্ম্মের মুখ্যতম প্রয়োজন। তৃতীয়তঃ, চিত্তের যখন ঐ রূপ অবস্থা জন্মে, তখন সমাধির অনুষ্ঠানাদির দ্বারা আত্মার উপলব্ধি করার সময় উপস্থিত হয়, চিত্ত তখন আত্মসাক্ষাৎকারের উপযুক্ত হয়, এই সময়ে যদি আবার নিত্যনৈমিত্তিকাদি কৰ্ম্মানুষ্ঠানের দ্বারাই সময় ব্যয়িত করা হয়, তবে আত্মসাক্ষাৎকারের মুখ্যতম উপায়ানুষ্ঠানের অবকাশ পাওয়া যায় না ; সুতরাং আত্মসাক্ষাৎকারের বাধা জন্মে, এই জন্য তখন নিত্যনৈমিত্তিক কৰ্ম্মেরও পরিত্যাগ করিয়া, কেবল সমাধি অনুষ্ঠানেরই চেষ্টা করিতে হয় । সমাধির চেষ্টা করিতে করিতে পরে তত্ত্বজ্ঞানের উদয় হইয়া মুক্তি হইতে পারে, এই হইল দ্বিতীয় প্রকারের কৰ্ম্মসংন্যাস বা কৰ্ম্ম পরিত্যাগ । তৃতীয় এবং চতুর্থ অধ্যায়ের দ্বারা এই দ্বিতীয় প্রকারের কৰ্ম্মত্যাগ আর নিষ্কামভাবে কৰ্ম্মানুষ্ঠান করা এতদুভয়কেই অনেক স্থলে জ্ঞানের হেতু বলিয়া ভগবান নির্দেশ করিয়াছেন। সুতরাং অৰ্জ্জুনের সন্দেহের কারণ হইয়াছে, কেন না, নিষ্কামভাবে কৰ্ম্ম করা আর কৰ্ম্ম পরিত্যাগ করা। এতদুভয় নিতান্ত বিরুদ্ধ ও বিভিন্ন, তাই এ স্থলে জিজ্ঞাসা করিতেছেন যে, “কৰ্ম্মসংন্যাস আর কৰ্ম্মযোগ এতদুভয়ের মধ্যে কোনটা প্ৰকৃত শ্রেয়ঙ্কর হইবে।” ফলতঃ প্ৰথম প্ৰণালীর কৰ্ম্মসংন্যাস এখানে মনে করা হয়