পাতা:শ্রীমদ্‌ভগবদ্‌গীতা-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শ্ৰীমদ্ভগবদ্গীতা।

কুরু নামে একজন চন্দ্রবংশীয় রাজা ছিলেন। তাছা হইতেই এই চক্রের নাম কুরুক্ষেত্র হইয়াছে, তিনি দুর্য্যোধনাদির ও পাণ্ডবদিগের পূর্বপুরুষ; এজন্য দুর্য্যোধনাদিকে কৌরব বলা হয়, এবং কখন কখন, পাণ্ডবদিগকেও বলা হয়। তিনি এই স্থানে তপস্যা করিয়া বরলাভ করিয়াছিলেন, এই জন্য ইহার নাম কুরুক্ষেত্র। মহাভারতে কথিত হইয়াছে যে তাঁহার তপস্যার কারণই উহা পুণ্যতীর্থ। ফলে চিরকালই কুরুক্ষেত্র পুণ্যক্ষেত্র বা ধর্ম্মক্ষেত্র বলিয়া প্রসিদ্ধ। শতপথ ব্রাহ্মণে আছে, “দেবাঃ হ বৈ সত্রং নিষেদুরগ্নিরিন্দ্রঃ সোমো মথোবিষ্ণুবিশ্বেদেবা অন্তত্রেবাশ্বিভ্যাম্। তেষাং কুরুক্ষেত্রং দেবযজনমাস। তস্মাদাহুঃ কুরুক্ষেত্রং দেবযজনম্।” অর্থাৎ দেবতারা এই খানে যজ্ঞ করিয়াছিলেন, এজন্য ইহাকে ‘দেবতাদিগের যজ্ঞস্থান’ বলে।

 মহাভারতের বনপর্ব্বের তীর্থযাত্রা পর্ব্বাধ্যায়ে কথিত হইয়াছে যে কুরুক্ষেত্র ত্রিলোকীর মধ্যে প্রধান তীর্থ। বনপর্ব্বে কুরুক্ষেত্রের সীমা এইরূপ লেখা আছে—“উত্তরে সরস্বতী, দক্ষিণে দৃষদ্বতী; কুরুক্ষেত্র এই উভয় নদীর মধ্যবর্ত্তী।” (৮৩ অধ্যায়) মনুসংহিতায় বিখ্যাত ব্রহ্মাবর্ত্তেরও ঠিক সেই সীমা নির্দিষ্ট হইয়াছে—

সরস্ব ত্যার্দেবনদ্যোর্যদস্তরং।
তং দেবনির্ম্মিতং দেশং ব্রহ্মাবর্ত্তং প্রচক্ষতে। ২ ৷ ১৭ ।

 অতএব কুরুক্ষেত্র এবং ব্রহ্মাবর্ত্ত একই। কালিদাসের নিম্নলিখিত কবিতাতে তাহাই বুঝা যাইতেছে।

ব্রহ্মাবর্ত্তং জনপদমখচ্ছয়িয়া গাহমানঃ
ক্ষেত্রং ক্ষত্রপ্রবনপিশুনং কৌরবং তস্তজেথাঃ।