পাতা:শ্রীরাজমালা (দ্বিতীয় লহর) - কালীপ্রসন্ন সেন বিদ্যাভূষণ.pdf/৩২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\ee রাজমালা । [ দ্বিতীয় প্রবল পরাক্রমে পুনর্বার মোগলদিগকে আক্রমণ করিল। কিন্তু ক্রমান্বয়ে আট মাস যুদ্ধ করিয়াও পাঠানদিগকে পরাজয় করিতে সক্ষম না হওয়ায়, মহারাজ বিজয় ক্রুদ্ধ হইয়া সেনাপতিগণের দণ্ডবিধান করতঃ শ্ৰীহট্ট থানা হইতে কালানাজিরকে আনাইয়া বিস্তর সৈন্যসহ চট্টগ্রামে প্রেরণ করিলেন। এই সেনাপতি প্রত্যুষে সমরক্ষেত্রে অবতীর্ণ হইয় প্রবল পরাক্রমের সহিত সমস্ত দিন যুদ্ধ করিয়াছিলেন। রাজা কর্তৃক অপমানিত সৈন্তাধ্যক্ষগণ কেহই তাহার সাহায্যাৰ্থ অগ্রসর না হওয়ায়, নাজির একাকী যুদ্ধহেতু ক্রমশঃ অবসন্ন হইয়া, চারিদণ্ড বেলা থাকিতে সমরানলে স্বীয় জীবন আহুতি প্রদান করিলেন । পাঠানগণ যুদ্ধ জয় করিয়া বিজয়োল্লাসে গড়ে প্রবেশ করিল। রাত্রিকালে কেহ নিশ্চিন্ত মনে আহাৰ্য্য প্রস্তুত করিতেছে, কেহ শ্রান্ত হস্তী ও ঘোড়াকে জলপান করাইতেছে, কেহ বা আহারে প্রবৃত্ত হইয়াছে, এই সময় ত্রিপুর সৈন্যগণ অকস্মাৎ গড়ে প্রবেশ করিয়া, পাঠানদিগকে আক্রমণ করিল। তাহারা অপ্রস্তুত ছিল, সুতরাং অধিকাংশ সৈন্য নিহত হইল এবং অল্প সংখ্যক পাঠান অতিকষ্টে পলায়ন করিয়া জীবন রক্ষা করিল। সেনাপতি মমারক খা ধৃত হইয়া লৌহ পিঞ্জরে আবদ্ধাবস্থায় রাজদরবারে নীত হইবার পর, তাহাকে চতুর্দশ দেবতা সমক্ষে বলি প্রদান করা হইয়াছিল। অতঃপর বিজয়মাণিক্য, মুসলমানগণের বারম্বার আক্রমণের প্রতিশোধ লইবার বিজয়মণিক্যের নিমিত্ত বঙ্গদেশ আক্রমণে কৃতসঙ্কল্প হইলেন । এই সময় পাঠান \& বঙ্গাভিযান । মোগলের মধ্যে সঙ্ঘর্ষ আরস্ত হওয়ায়, পাঠানগণ বিশেষ বিব্রত ও অপেক্ষাকৃত দুর্বল হইয়াছিল। স্থলেমান কররাণির পুত্র দায়ুদ এই সময় বঙ্গের সিংহাসনে অধিষ্ঠিত ছিলেন। মহারাজ বিজয় পঞ্চ সহস্র রণতরী, পঞ্চ সহস্ৰ অশ্বারোহী এবং চব্বিশ সহস্র পদাতিক ও বহুসংখ্যক গোলন্দাজ সৈন্য লইয়া যুদ্ধ যাত্রা করিলেন। তিনি প্রথমেই সুবর্ণগ্রামের মুসলমান শাসনকৰ্ত্তাকে পরাজয় করিয়া, সেই প্রদেশ লুণ্ঠন করিলেন। তৎপর ক্রমান্বয়ে লক্ষ্যা নদী অতিক্রম করিয়া পদ্মাতীর পর্য্যন্ত অগ্রসর হইয়াছিলেন। তিনি যে পথ অনুসরণ করিয়া যে যে স্থানে গিয়াছিলেন, ত্রিপুর বংশাবলীতে তাহা সুস্পষ্টভাবে লিপিবদ্ধ হইয়াছে , সেই ংশ নিক্ষে উদ্ধৃত হইল ;– “বিজয়মাণিক্য রাজা, এমত করিয়া সজ্জা, দিগ্বিজয়ে গমন করিল। গোমতী নদী দিয়া, চলে নৌকা ভাটি বাইয়া, মেঘনা নদেতে উত্তরিল ॥ তাহে স্নানদান করি, চলিলেন বরাবরি, ব্ৰহ্মপুত্র কুলে উত্তরিল। তাহাতে করিয়া স্নান, ব্রাহ্মণে করিয়া দান, ধলেশ্বরী উজাইয়া চলিল ॥