পাতা:শ্রীরাজমালা (দ্বিতীয় লহর) - কালীপ্রসন্ন সেন বিদ্যাভূষণ.pdf/৩৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাজমালা [ विडैौछ् ש8 כי যোদ্ধা ছিল, এবং প্রয়োজন মতে সকলেই মাতৃভূমির কল্যাণ কামনায় যুদ্ধক্ষেত্রে অবতীর্ণ হইতে বাধ্য ছিল, সুতরাং হসমভোজনে তাহাদের কোন শ্রেণীই বাদ পড়িত না। এই ভোজ কোন রাজার শাসন সময়ে, অথবা কতকাল যাবত প্ৰবৰ্ত্তিত হইয়াছে, তাহা নির্ণয় করা দুঃসাধ্য। ইহা যে বহু প্রাচীন প্রথা, সে বিষয়ে সন্দেহ নাই । এই ভোজের মধ্যে এক গভীর রাজনীতি নিহিত রহিয়াছে। রাজ্যের creen ad, শান্তিবিধানের সহিত এই নীতি প্রবর্তনের বিশেষ সম্বন্ধ ছিল । রাজনৈতিক উদেষ্ঠ | প্রাচীনকালে পাৰ্ববত্য প্রজাগণ—বিশেষতঃ কুকি ও হালাম শ্রেণীর প্রজাবৰ্গ নিতান্ত দুৰ্দ্ধৰ্ষ এবং উগ্র স্বভাবাপন্ন ছিল। বিজয়া দশমী দিনে যুদ্ধ যাত্রা করা ইহারা বিশেষ পুণ্যকাৰ্য্য এবং অবশ্য কৰ্ত্তব্য বলিয়া মনে করিত। এই যাত্রাকে হালামদিগের ভাষায় হাকুথুম বলে । তাহার এই কৌলিক প্রথা রক্ষার নিমিত্ত এবং স্বার্থ সাধনের অভিপ্রায়ে দলবদ্ধ হইয়া, বিজয় দশমীর রাত্রিতে পার্শ্ববৰ্ত্তী পল্লী সমূহে অকস্মাৎ পতিত হইয়া নরহত্যা এবং প্রজার সর্ববস্ব লুণ্ঠন করিত। সেকালে ইহাদের অমানুষিক অত্যাচারে বহু জনপদ উচ্ছন্ন এবং অরণ্যে পরিণত হইয়াছে। শারদীয় পূজার কালে ইহাদিগকে আবদ্ধ করা না হইলে সেই উপদ্রব নিবারণ করা অসম্ভব ছিল, এবং রাজামুকম্পাসূচক কৌশল অবলম্বন ব্যতীত এক সময়ে সকলকে এক স্থানে অবরুদ্ধ রাখিবার অন্য উপায় ছিল না। এই সকল বিষয় চিন্তা করিয়াই রাজনীতি-কুশল ত্রিপুরেশ্বর ‘হসমভোজন প্রবর্তন করিয়াছিলেন ; এবং অদ্যাপি সেই প্রথা অক্ষুন্নভাবে প্রতিপালিত হইয়া আসিতেছে। দুর্গোৎসবের বোধনের দিবস হইতেই দূরবর্তী পার্বত্য প্রজাগণের রাজধানীতে আগমন আরম্ভ হয়। প্রজাগণ সকলেই, বিশেষতঃ প্রত্যেক সম্প্রদায়ের সরদারগণ এই সময় রাজদত্ত ভোজে যোগদান করিতে বাধ্য ছিল । সরদারগণই অনিষ্টপাতের মূল, সুতরাং তাহাদের উপস্থিতির প্রতি তীক্ষ দৃষ্টি রাখা হইত। যে সরদার বিশিষ্ট হেতু ব্যতীত অনুপস্থিত থাকিত, তাহাকে কঠোর দণ্ড প্রদানের বিধান ছিল। রাজার আমন্ত্রণে উপস্থিত হওয়া সকলেই গৌরবজনক এবং অবশ্য কৰ্ত্তব্য মনে করিত, সুতরাং অনুপস্থিতির সংখ্যা অধিক হইত না। বৰ্ত্তমানকালে পার্বর্বত্য প্রজাগণ দ্বারা পূর্বের স্যায় অত্যাচারের আশঙ্কা নাই, এ জন্য তাহাদিগকে ভোজে উপস্থিত হইবার নিমিত্ত রাজদরবার হইতে পূর্ববৎ পীড়াপীড়ি করা হয় না। তথাপি প্রতি বৎসর বহুসংখ্যক লোক এই বিরাট ভোজে উপস্থিত হইয়া থাকে। অশিক্ষিত এবং উচ্ছ.খল পার্বত্য প্রজাবৰ্গকে বৎসরে একবার রাজা-প্রজা সম্বন্ধের গুরুত্ব বুঝাইয়া দেওয়া এই ভোজের অন্যতম উদ্দেশ্য। এই সময় উপস্থিত প্রজাগণ রাজার নজর প্রদান করে, এবং রাজসরকার হইতে তাহাদিগকে বস্ত্র, বিবিধ দ্রব্যজাত ও মুদ্র রাজপ্রসাদ স্বরূপ প্রদান করা হয়। সরদারদিগের মধ্যে উপযুক্ত ব্যক্তিকে এই সময় উপাধি প্রদানদ্বারা গৌরবান্বিত করিবার ব্যবস্থাও আছে।