পাতা:শ্রীরাজমালা (দ্বিতীয় লহর) - কালীপ্রসন্ন সেন বিদ্যাভূষণ.pdf/৩৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

☽ ←Ꮡ রাজমালা । * দ্বিতীয় করিয়া, তদ্বারা সেনাপতি দৈত্য নারায়ণকে বধ করাইবাব কথা পূর্বে বলা হইয়াছে। সেকালে লস্করের পদ বিশেষ সন্মানিত ছিল এবং তঁহারই আপন আপন বিভাগের সর্বময় শাসনকৰ্ত্ত ছিলেন । এই পদ মুসলমান শাসনের অনুকরণে স্থষ্ট হুইয়াছিল। বিচার কার্মের নিমিত্ত তৎকালে লিখিত তাইন, অথবা আদালত প্রতিষ্ঠিত ছিল না । শাসনকৰ্ত্তাগণ স্থায় ও ধৰ্ম্মনুমোদিত যুক্তি অবলম্বনে স্বীয় বিবেকানুযায়ী বিচার কার্য সম্পাদন করিতেন। সেকালে আইন ব্যবসায়ীর কুটবুদ্ধি ধৰ্ম্মধিকরণে প্রবেশ লাভের সুযোগ পাইত না । দোষী ব্যক্তি সরল চিত্তে বিচারক সমক্ষে আত্মদেয স্বীকার করিত, মিথ্যা সাক্ষী উপস্থিত করিয়া নির্দোষীকে দোষী সাব্যস্ত করিবার প্রয়াস ছিল না । বিচারপ্রার্থিগণ বিচারককে পিতা, অভিভাবক অথবা দেবতার স্যায় মনে করিত এবং কোন পক্ষই র্তাহার নিকট মনোগত ভাব ব্যক্ত করিতে কুষ্ঠিত হইত না, সুতরাং সেকালের বিচারে বর্তমানকালের ন্যায় আইন-নজিরের “মরপেচ’ তথলা সওয়াল-জবাবের সোর হাঙ্গামা ছিল না ; এই কারণে বিচারের পথ তাতিশয় সরল ছিল এবং সহজেই সত্যোদঘাটিত হইত। অপিচ, অর্থ-প্রত্যগীকে রসুম, তলপান, লারবরদারী ইত্যাদির চাপে সর্ববস্বান্ত হইতে হইত না । অপরাধগণের কারাদণ্ডের ব্যবস্থা ছিল কি না, বুঝিবার উপায় নাই। গুরুতর অপরাধের নিমিত্ত শিরচ্ছেদ, অথবা শূলে চড়াইয়া প্রাণদণ্ড করিবার ব্যবস্থা ছিল । কোন কোন সময় দণ্ডার্ক ব্যক্তিকে কুকুরদ্বারা খাওয়ান হইত। এতদ্ব্যতীত হস্তী পদতলে নিক্ষেপ এবং নাসা, কর্ণ ইত্যাদি ছেদনের ব্যবস্থা থাকাও জনা যাইতেছে । এই সকল দণ্ডাদেশ প্রাস্তরে কিম্বা অন্য প্রকাশ্য স্থানে সাধারণের সমক্ষে কার্য্যে পরিণত করিবার বিধান ছিল । ইহার কোন কোন দণ্ড বর্তমানকালে কঠোর বলিয়া বিবেচিতৃ হইতে পারে, কিন্তু ইহা যে সময়োপযোগী ব্যবস্থা ছিল, সমসাময়িক বিভিন্ন দেশীয় দণ্ড পদ্ধতির সহিত তুলনা করিলে ইহা স্পষ্টই হৃদয়ঙ্গম হইবে । * বিচার-প্রণালী ।” প্রাণদণ্ডের নিয়ম ।

  • অন্যান্ত রাজ্যের আইনে ঘেরূপ সাম্প্রদায়িক ভেদ-ব্যবস্থা দৃষ্ট হয়, ত্রিপুরায় তদ্রুপ ব্যবস্থা কোন কালেই ছিল না । ত্রিপুর রাজ্যের পাশ্ববৰ্ত্তী হেড়ম্ব রাজ্যে মহারাজ গোবিন্দচন্দ্রের শাসনকালে যে দণ্ডবিধি প্রচলিত হইয়াছিল, তাহার নিম্নোদ্ধৃত ধারাগুলি লক্ষ্যযোগ্য ;–

“মারণে মারণং—মরণেতে যদি মারিত ব্যক্তি মৃত হয়, তবে তাহাকেহ রাজা প্রতিবদল শুলাদিদ্বারা মারিতে হয় ।” “কৃতাপরাধোপি রাজনি কৃতপ্রহরং শূল মারোপ্যাগ্নেপচেৎ—কৃতাপরাধী ষে রাজা, তাকেহ যদি কোন ব্যক্তিয়ে প্রহার করে তবে তাকে শুল দিয়া গাথিয়া অগ্নিতে পাচনা করিব।” “ব্রাহ্মণেষু কোপাৎ পাণিং প্রহরণ শুদ্ৰঃ পাণি ছেদন দগু:—শুদ্র যদি ক্রোধ করিয়া ব্রাহ্মণকে হস্তদ্বারা প্রহার করে তবে তাহার হস্ত ছেদন করিতে হয় ।”