পাতা:শ্রীরাজমালা (দ্বিতীয় লহর) - কালীপ্রসন্ন সেন বিদ্যাভূষণ.pdf/৩৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাজমাল। { দ্বিতীয় هوه পার্বত্য প্রদেশের নিমিত্ত আর একটী সাঙ্কেতিক চিন্তু প্রচলিত ছিল, তাহ বিশেষ গুরুতর। এই চিকু লৌহ নিৰ্ম্মিত ছিল ; স্থানীয় ভাষায় ইহার নাম ‘ফুরাই’ । এই চিন্তুবাহক পাৰ্ববত্য প্রদেশে যাইয়া বাচনিক যে আজ্ঞা জ্ঞাপন করিত, তাহা পৰ্ব্বত্য প্রজাগণ নিঃসঙ্কোচে রাজাজ্ঞা বলিয়া গ্রহণ ও পালন করিত। রাজার আদেশ ব্যতীত এই চিন্তু বাহির করা হইত না ; এবং যুদ্ধ বিগ্ৰহাদি বিশেষ গুরুতর কারণ ব্যতীত সামান্য কারণে ইহা ব্যবহারের প্রথা ছিল না। এই চিকুটী লইয়া সরকারী “বিনন্দিয়া সিপাহী পাৰ্ব্বত্য যে কোন পল্লীতে যাইয়া, যে আদেশ পালন করিতে হইবে তাহার মৰ্ম্ম জনাইত, এবং ফুরাইট সেই পল্লীতে দিয়া আসিত। সেই পল্লীর লোক অবিলম্বে, তাহদের সন্নিহিত অন্য পল্লীতে ফুরাই পৌছাইয় রাজাজ্ঞা জানাইয়া দিত। এই ভাবে ক্রমান্বয়ে এক পল্লী হইতে অন্য পল্লীতে ফুরাই চালিত এবং সঙ্গে সঙ্গে রাজার আদেশ প্রচারিত হইত। ফুরাইট হাতে হাতে সমস্ত পার্বত্য পল্লী প্রদক্ষিণ করিয়া যে স্থান হইতে বাহির হইয়াছে, সেই স্থানে ফিরিয়া আসিত । এই নিয়মে অতি সহজে এবং অল্প সময়ের মধ্যে সমগ্ৰ পাৰ্ব্বত্য প্রদেশে রাজনিদেশ প্রচারিত হইত। সাধারণতঃ পার্বত্য প্রজাদিগকে কোন নির্দিষ্ট সময়ে, নিৰ্দ্ধারিত স্থানে সম্মিলিত হইবার নিমিত্ত ফুরাই প্রেরণ করা হইত। ফুরাইতে কোন প্রাণীর রক্ত মাখাইয়া দিলে বুঝা যাইত—যুদ্ধ কর্য্যে যোগদান করিতে হইবে। তাহার সঙ্গে লঙ্কা মরিচ বাধিয়া দিলে বুঝা যাইত, কাৰ্য্য বিশেষ জরুরী। এরূপ স্থলে এক পল্লীতে ফুরাই উপস্থিত হওয়া মাত্র মুহূৰ্ত্ত কাল বিলম্ব না করিয়া সেই পল্লীর লোকের অন্য পল্লীতে তাহা পৌছাইয়া দিতে বাধ্য ছিল। দিবারাত্রি অবিশ্রান্তভাবে এই চিহ্ল চালাইতে হইত ; ঝড় বৃষ্টি বা কোন প্রকারের বাধা বিঘ্নই এই কার্য্যের বাধা ঘটাইতে পারিত না । কোন পল্লীর লোক যথাসময়ে ফুরই প্রেরণ পক্ষে শৈথিল্য করিলে তাহাদের গুরুতর দণ্ড হইত। বঁাশের দ্বারাও অনেক সময় ফুরাই প্রস্তুত করা হইত, তাহাকে স্থানীয় ভাষায় ‘ওয়াথলং’ বলে। এতদ্বারাও ফুরাইর উদ্দেশ্য সংসাধিত হইত। বংশ নিৰ্ম্মিত ফুরাই বা ‘ওয়াথলং’এর গোড়াভাগ অগ্নিতে পোড়াইয়া দিলে তাহা জরুরী বলিয়া গণ্য হইত। স্মরণাতীত কাল হইতে আরম্ভ করিয়া, মহারাজ বীরচন্দ্র মাণিক্যের প্রথম আমল পৰ্য্যন্ত এই প্রথা সুশৃঙ্খলভাবে চলিয়া আসিতেছিল। কাল-মাহাক্স্যে 'কদবার’ স্বায় ‘ফুরাই চালনার কার্ষ্যেও ব্যভিচার আরস্ত হইল। সরকারের অগোচরে সময় সময় পার্বত্য পল্লীতে ‘ফুরাই প্রেরণ করা হইত। এই নিয়মের ব্যভিচারে রাজ্যে নানাবিধ অনিষ্টপাত ও অশান্তি উৎপাদনের আশঙ্কা থাকায়, মহারাজ বীরচন্দ্র মাণিক্যের শাসনকালে খাস আপীল আদালতের (বৃটিশ গবর্ণমেণ্টের হাইকোর্ট স্থানীয়) ১২৯৫ ত্রিপুরাব্দের ২২শে আশ্বিন তারিখের আদেশমুলে এই প্রথা রহিত