পাতা:শ্রীরাজমালা (দ্বিতীয় লহর) - কালীপ্রসন্ন সেন বিদ্যাভূষণ.pdf/৪২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লছর } মধ্য-মণি । ২aখ অগ্নিকুণ্ডে অমানচিত্তে দলে দলে আত্মদান করিয়াছেন। অনেকস্থলে সতীর শ্মশানক্ষেত্রে কীৰ্ত্তিস্তস্ত দণ্ডায়মান থাকিয়া, অতীতের সতীত্ব গৌরব ঘোষণা করিতেছে। সহমরণ-প্রথা কেবল ভারতেই ছিল এমন নহে। শাকদ্বীপ, জবদ্বীপ, ভারতের বহিরে লম্বকদ্বীপ, চীন, থেশ, গ্ৰীশ, রোম ও উত্তর ইউরোপ প্রভৃতি সহমরণ-পখী । অনেক দেশেই এই প্রথা প্রচলিত ছিল এবং কোন কোন দেশে এখনও বিদ্যমান আছে। তবে, সেই সকল দেশের প্রথা অন্যরূপ। অধিকাংশ স্থলেই স্ত্রীকে কোন না কোন প্রকারে বধ করিয়া পতির সহিত একসঙ্গে সমাহিত করা হয়। কোল কোন দেশে রাজার মৃত দেহের সঙ্গে বহুসংখ্যক দাসদাসী ও রাজার প্রিয় ব্যক্তিগণ সহগামী হইয়া থাকে। কুকিদের মৃত রাজার সঙ্গে যত অধিক সংখ্যক মস্তক প্রদান কর বাইতে পারিত, ততই গৌরব বৃদ্ধি হইত। এইসূত্রে তাহাদের সান্নিধ্যবাসী শত শত আসামী ও বাঙ্গালীর মুণ্ডপাত হইবার বিস্তর প্রমাণ পাওয়া যাইবে । কিন্তু ভারতীয় হিন্দুর স্যায় জীবন্ত দেহ দগ্ধ করিবার প্রথা অন্ত দেশে বা জাতিতে নাই। এই প্রথার অনুকূলে ও প্রতিকূলে বিদেশীয় অনেক ভ্ৰমণকারী ও পণ্ডিত সমাজ অনেক গ্রন্থ ও প্রবন্ধ প্রণয়ন করিয়াছেন। তন্মধ্যে প্রফেসর এইছ. এইচ্‌, উইলসন, গ্রীক পণ্ডিত প্রপারটীয়স, সিসিরো, ইউরোপীয় পণ্ডিত বয়শেশ, ঐতিহাসিক হেরোদোডস, স্তর হ্যালিডে, বকলাগু, ভ্রমণকারী এলফিনষ্টোন, আবিস্তুবই, মার্কোপলো, ওডরিক, গ্যাসপারে, জে, পি, ভিনসেজে প্রভূতির নাম উল্লেখযোগ্য । পতির সহিত সহমৃতা হওয়া পত্নীর অবশ্য কৰ্ত্তব্য, সকল শাস্ত্রের এরূপ অভিপ্রায় বলিয়া মনে হয় না ; যদি তাহাই হইবে, তবে প্রতিকূল মত শাস্ত্রগ্রন্থে সন্নিবেশিত হইত না । যে স্ত্রী স্বেচ্ছায় আত্মোৎসর্গ করিবেন, তাহার পক্ষেই সহমরণ ব্যবন্থেয়। যে রমণী সহমৃতা হইতে অনিচ্ছুক, তিনি ব্রহ্মচৰ্য্য অবলম্বন করিয়া জীবন যাপন করিবেন । প্রাচীনকালে পতিপ্রাণ - মহিলাগণের মধ্যে পতির সহগমনে পরাম্মুখ স্ত্রীর সংখ্যা বেশী ছিল বলিয়া মনে হয় না । সমাজের অবস্থা পরিবর্তনের সঙ্গে ক্রমশঃ মানুষের মানসিক ভাব এবং বিশ্বাস namaa, অন্য প্রকার হইয়াছিল। সেই সঙ্গে সহমরণেরও ভাবান্তর ব্যভিচার । দেখা গেল। অনেক স্থলে লোকগঞ্জনার ভয়ে, কিম্বা সমাজে গৌরব লাভের আকাঙ্ক্ষায়, অনেক স্ত্রীলোকের অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাহাদিগকে জোরজবরদস্তী করিয়া পতির শবের সঙ্গে দগ্ধ করা হইত। অনেক স্থলে আবার স্বার্থাদ্ধ জ্ঞাতিবর্গ সম্পত্তির অংশ গ্রাস করিবার অভিপ্রায়ে, সদ্য বিধবাকে পতির শবের সঙ্গে বাধিয়া, শ্মশানে কাষ্ঠ চাপা দিয়া দগ্ধ করিয়া মারিত। এই সময় বিধবাগণের প্রতি অত্যাচারের মাত্রা অত্যন্ত বৃদ্ধি পাইয়াছিল । ইহা মুসলমান রাজত্বকালের কথা । 을 ব্রহ্মচর্য্য-লত ।