পাতা:শ্রীরাজমালা (দ্বিতীয় লহর) - কালীপ্রসন্ন সেন বিদ্যাভূষণ.pdf/৪৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২১৬ রাজমালা । t विडौब $ নিমিত্ত সৰ্ব্বদা চেণ্ঠিত থাকাই ইহাদের স্বভাব। এই সকল কারণে প্রায়ই গুণ্ডাকে দলপতি করা হয় না। একদল হইতে অপসারিত হস্তী অন্ত দলে সহজে মিলিতে পারে না। সকলে মিলিয়া তাহাকে মারিয়া তাড়াইয়া দেয়। হস্তীযূথ সর্বদা একস্থানে থাকে না। যে স্থানে প্রচুর পরিমাণে তৃণ পল্লবাদি পাওয়া যায়, অথচ নিকটে জল আছে, সেইস্থানে কিয়ৎকাল বিচরণ করে। সমস্ত দিন আপন আপন ইচ্ছামুরূপ বেড়াইয়া আহার করে, তখন প্রায়ই দল ছাড়িয়া দূরে দূরে ছড়াইয়া পড়ে। রাত্রিতে কোনও শৃঙ্গদেশে একত্রিত হইয়া, ছোট ছোট বাচ্চাগুলিকে মধ্যস্থলে রাখিয়া তাহদের চতুষ্পার্শ্বে বড় হস্তীগুলি শয়ন করে। ইহার এত সতর্ক যে, নিদ্রিতাবস্থায় সামান্য শব্দ পাইলেই হঠাৎ জাগ্রত হইয়া উঠিয়া দাড়ায় । অনেক সময় ইহারা পাৰ্ব্বত্য নদী, ছড়া বা হ্রদে দলবদ্ধভাবে নামিয়া স্নান ও জলক্রীড়া করে। তাহদের বিশাল বপুর অবরোধে বাধা প্রাপ্ত হইয়া অনেক সময় নদীর বেগ মৃদু হয়, তখন উপরিভাগের (উজানের ) জল স্ফীত হইয়া উঠে এবং উহাদের আলোড়নে নিম্নভাগের ( ভাটির ) জল কর্দমময় হইয়া যায়। অধিক উত্তাপের সময় ইহার প্রায়ই জলমগ্লাবস্থায় কিম্বা শীতল গুহাস্থিত নীবিড় অরণ্যছায়ায় অবস্থান করে। গ্রীষ্মকালে ইহারা দূরবর্তী গভীর পর্ববতে চলিয়া যায় এবং শীতের সমাগমে পুনর্ববার নামিয়া আইসে । হস্তীযুথ যে স্থানে আট দশ দিবস অবস্থান করে, সেই স্থান বনজঙ্গল শূন্য হইয়া পড়ে। এক স্থানের আহাৰ্য ফুরাইয়া গেলে, তাহারা অন্য স্থানে চলিয়া যায়। স্থান পরিত্যাগের সময় উপস্থিত হইলে ‘পালমাই’এর ইঙ্গিত মতে সকলে একস্থানে মিলিত হয় এবং পর পর ভাবে শ্রেণীবদ্ধ হইয়া পালমাইএর পশ্চাদমুসরণ করে । দলের প্রধান গুগুটি প্রায়ই সকলের পেছনে থাকে। স্থানত্যাগের কালে, সদ্যপ্রসূত বাচ্চ লইয়া কোন হস্তিনী দলের অনুসরণে অসমর্থ হইলে, তাহদের রক্ষণাবেক্ষণের নিমিত্ত প্রহরীরূপে তিন চারিট হস্তিনী পেছনে রাখিয়া অবশিষ্ট দল সুবিধাজনক স্থানে চলিয়া যায়। পেছনের দল, বাচ্চ সহ ধীরে ধীরে চলিয়া দুই তিন দিন পরে যাইয়া তাহাদের সঙ্গে মিলিত হয় । রামকল, তারা, ডুমুরগাছ এবং মুলিবাঁশের করুল (কচিবঁাশ ) হস্তীর প্রিয় খাদ্য । এতদ্ব্যতীত প্রায় সকল জাতীয় তৃণ পল্লবই ইহারা আহার করে। পদ্মের মৃণাল এবং কৎবেল ইহাদের উপাদেয় খাদ্য । হস্তীযূথ সাধারণতঃ এক পথেই সর্বদা বাতায়াত করে। তাহদের গমনাগমনের পথ পচিশ ত্রিশ হস্ত পরিসর বিশিষ্ট এবং রেলপথের স্যায় সোজা হয়। স্থানীয় ভাষায় এই রাস্তাকে ‘দোয়াল’ বলে। জন-মানব শূন্ত নীবিড় অরণ্যে হস্তীর দোয়াল ব্যতীত অস্ত পথ নাই । সেখানে মনুষ্য গমন করিলে এই পথ অবলম্বনেই চলাফির করিতে হয়। ইহাতে প্রতি পাদক্ষেপে হস্তীযুথের সম্মুখে পতিত হইবার আশঙ্কা থাকে ।