পাতা:শ্রীরাজমালা (দ্বিতীয় লহর) - কালীপ্রসন্ন সেন বিদ্যাভূষণ.pdf/৪৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ఫి$$9 রাজম স্বরে উত্তর করিল—“আমি অতিশয় দুর্ভাগিনী, রাজকন্যা হইয়াও মনুষ্যের অসহনীয় দারুণ দুঃখ ভোগ করিতেছি। যুবতীর আমুপূর্বিক বিবরণ শ্রবণ করিয়া রাঙ্গিয় বুঝিল, ইনিই তাহার অনুসন্ধেয় রাজকুমারী। তখন সে আশ্বাস বাক্যে বলিল, “তোমার ভয় নাই, আমি রাক্ষসীকে বধ করিয়া তোমার উদ্ধার সাধন করিব । রাক্ষসী কোন সময় আসিবে আমায় বল |” কুমারী বলিল, “রাক্ষসী আসিবার আর বেশী বিলম্ব নাই। কিন্তু সেই ভীষণ মূৰ্ত্তি রক্ষসীকে কি তুমি বধ করিতে পরিবে ?” ইহা বলিয় রাজকুমারী রাঙ্গিয়ার চক্ষুর উপর স্বীয় কাতর দৃষ্টি স্থাপন পূর্বক ব্যথিত প্রাণে পলকবিহীন নয়নে চাহিয়া রহিল। তাহার সেই নৈরাশুদৃষ্টি রাঙ্গিয়ার হৃদয়কে চঞ্চল করিয়া তুলিল। সে প্রবোধ বাক্যে কুমারীর ভয় ভাবনা নিরাশন জন্য বিস্তর চেষ্টা করিল। ঠিক সন্ধ্যার সময় রাক্ষসী গভীর গর্জন করিয়া আসিতে লাগিল । তাহার অঙ্গের বাতাসে প্রবল ঝড় উত্থিত হইল। রাঙ্গিয়া বিশেষ সতর্কতার সহিত প্রস্তুত ছিল, রাক্ষসী পুরীতে প্রবেশ করিয়াই তাহাকে ভীষণবেগে আক্রমণ করিল। উভয়ের অনেকক্ষণ ঘোরতর যুদ্ধের পর রাক্ষসীর পরাজয় ঘটিল, রাঙ্গিয় স্বতীয় অস্ত্রদ্বার। তাহার মস্তক ছেদন করিল। অতঃপর রাঙ্গিয় রাজকুমারীকে সহ আসিয়া ভূতুয়ার সহিত মিলিত হইল । এবং অবিলম্বে দোয়াপাথর পরিত্যাগ করিয়া, রাজকুমারী ও ভূতুয়াকে সহ রাজধানী অভিমুখে যাত্রা করিল। শ্বেতহস্তীর দস্তদ্বয় মৃত্তিকা গৰ্ব হইতে উঠাইয়া সঙ্গে লইল । অনেক গিরিকন্দর, হ্রদ, উপত্যক অতিক্রম করিয়া দীর্ঘকালের পর তাহার। রাজধানীতে পৌছিল। রাজা ও রাণী, হারানিধি রাজকুমারীকে পাইয়া আনন্দ-সাগরে ভাসমান হইলেন। রাণী, কন্যাকে কোলে বসাইয়া বারম্বার মুখচুম্বন করিতে লাগিলেন । রাজ্যময় আনন্দকোলাহল উত্থিত হইল, ঘরে ঘরে মাঙ্গলিক কাৰ্য্য এবং আমোদ প্রমোদের অনুষ্ঠান চলিল । রাঙ্গিয়া, রাজাকে বিনীতভাবে প্রণাম করিয়া শ্বেতহস্তীর দস্তদ্বয় উপঢৌকন প্রদান করিল। রাজা হৃষ্টচিত্তে রাঙ্গিয়াকে আলিঙ্গন করিয়া বলিলেন, “তুমি আমাকে পুনৰ্জ্জীবিত করিয়াছ। তাহার পুরস্কার স্বরূপ আমার প্রাণতুল্য দুহিতাসহ অৰ্দ্ধ রাজ্য তোমার হস্তে অপর্ণ করিতেছি।” ইহার পর বিপুল সমারোহে রাঙ্গিয়ার সহিত রাজকুমারীর উদ্বাহক্রিয় সম্পাদিত হইল। ভূতুয়া রাজার পারিষদ শ্রেণীতে স্থান পাইল । রাজারাণী, কন্যা এবং জামাতাকে লইয়া মুখে কালাতিপাত করিতে লাগিলেন । এই অবস্থায় কিয়ৎকাল অতীত হইবার পর, রাজা ভোগবাসনায় বীতশ্রদ্ধ হইয়। উঠিলেন। তখন তিনি জামাতার হস্তে সমগ্র রাজ্যভার অপর্ণ করিয়া, ভগবদারাধনার নিমিত্ত সস্ত্রীক বনগমন করিলেন। রাঙ্গিয়া, রাজকুমারীকে সহ মুখে রাজস্থ করিতে থাকিল ।