পাতা:শ্রীরাজমালা (দ্বিতীয় লহর) - কালীপ্রসন্ন সেন বিদ্যাভূষণ.pdf/৪৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৭ ট রাজমালা । [ দ্বিতীর কেহ বলিতে পারে না। রাজমালার বর্ণনার সহিত মিলাইলে স্পষ্টই বুঝা যাইবে, ইহাই কলমিগড়ের ভগ্নাবশেষ । কৈলা ;–(১৩ পৃঃ—৪ পংক্তি )। কৈলাসহর । এই স্থান শ্ৰীহট্ট জেলার সীমান্ত প্রদেশে মমুনদীর তীরে অবস্থিত। ইহার প্রাচীন নাম ছাসুলনগর । কৈলাসহর নাম কত কালের, এবং কি উপলক্ষে এই নামকরণ হইয়াছে, তাহা নির্ণয় করা দুঃসাধ্য। বর্তমান কৈলাসহরের অনতিদূরে উনকোট তীর্থ এবং মহাদেব মূৰ্ত্তি প্রতিষ্ঠিত আছেন। ত্রিপুরার ভূতপূর্ব প্রধান মন্ত্রী স্বৰ্গীয় ধনঞ্জয় ঠাকুর মহোদয় বলিয়াছেন—ইহা শিবাধিষ্ঠিত স্থান বলিয়াই কৈলাস + হর = কৈলাসহর” নাম হইয়াছে। স্থানীয় প্রবাদানুসারে ইহার প্রাচীন নাম ‘কলা-হাওর’। শ্রীহট অঞ্চলে জলাভূমি (বিল) কে হাওর বলে। এই জলময় স্থানে বিস্তর রামকলার বন ছিল, এই জন্য 'কলা-হাওর’ নাম হইয়াছে । আবার কাহারও কাহারও মতে, এখানে কয়লার খনি ছিল বলিয়া স্থানের নাম ‘কয়লা-হাওর’ হইয়ছে । তাহাদের মতে কলা-হাওর বা কয়লা-হাওর নাম ক্রমে পরিবর্তিত হইয়া, কৈলাসহর হইয়াছে । ইহার কোনটী গ্রহণীয়, নির্ণয় করিবার উপায় নাই । প্রচলিত একটা গ্রাম্য ছড়াদ্বার} জানা যাইতেছে, রাজধানী স্থাপনের পূর্বে কিম্বা রাজধানী উঠাইয়া লইবার পরে কোন এক সময়ে এই স্থানের রাস্তাঘাট নিতান্তই দুর্গম হইয়াছিল। ছড়াট এই ;— “হাতে লাঠি, বনে ধর । তবে যাবি কলাহর ” এই স্থানে যাইতে এক হাতে লাঠি এবং অন্য হাতে বন জঙ্গলের উপর ভর করিতে হইত। এখানে রাজধানী স্থাপনের পর হইতে বোধ হয় সাধারণের এই কস্ট কিয়ৎ পরিমাণে দূর হইয়াছিল। অতি প্রাচীনকাল হইতে ইহা কুকি জাতির বসতিস্থান ছিল, এখনও দূরে দূরে কুকিপল্লী আছে। এতদঞ্চলে বর্তমান কালে ত্রিপুরেশ্বরের অধীনস্থ চারি জন দারহুলা ও তিন জন লুসাই রাজা বাস করিতেছেন। এখানকার প্রচলিত ‘কাতাল ও কাকচাদ ঘটিত আখ্যায়িক পূর্বে প্রদান করা হইয়াছে। ত্রিপুর রাজ্যের সদর ব্যতীত অন্যান্য বিভাগের তুলনায় কৈলাসহর বিভাগে হিন্দু ও মুসলমান সন্ত্রান্ত বংশীয় অধিবাসীর সংখ্যা অধিক, এখানে অর্থশালী লোকও অনেক আছে। বহুসংখ্যক কুকিরাজ, সন্ত্রান্ত বংশীয় তালুকদার, ধনশালী ব্যবসায়ী প্রভৃতি দ্বারা এই স্থান ত্রিপুর রাজ্যের একটা গণনীয় বিভাগে পরিণত হইয়াছে। পূর্বে এখানে ত্রিপুরার রাজধানী ছিল, ত্রিপুরেশ্বরগণ বৈদিক যজ্ঞাদি সম্পাদনারা ইহাকে পুণ্যক্ষেত্রে পরিণত করিয়াছিলেন, উনকোট মাহাত্ম্য অনুসারে এই স্থান সুপবিত্র তীর্থক্ষেত্র মধ্যে পরিগণিত। এখানে প্রতি বৎসর অশোকাষ্টমীতে বিস্তর যাত্রী সমাগম হইয়া থাকে। কৈলাসহর প্রধান বাণিজ্য স্থান। পর্বতজাত কাপাস ও নানা জাতীয় কাষ্ঠ এখানকার প্রধান পণ্য দ্রব্য । ইহার ব্যবসায় দ্বারা অনেকে ধনশালী হইয়াছে । প্রতি বৎসর হস্তীখেদস্বারাও বিস্তর অর্থাগম হইয়া থাকে ।