পাতা:শ্রীরাজমালা (দ্বিতীয় লহর) - কালীপ্রসন্ন সেন বিদ্যাভূষণ.pdf/৫২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

७) ०३ রাজমালা । { দ্বিতীয় এই সাতগাও ও বালিশিরা বর্তমানকালেও ত্রিপুরেশ্বরের জমিদারীর অন্তভূক্ত আছে । মহারাজ বিজয়মাণিক্য দিগ্বিজয়কালে এই স্থানে যাইয়া বিজয়পুর নামে এক গ্রাম স্থাপন করিবার নিদর্শন রাজমালায় পাওয়া যায় । বিক্রমপুর }—(৫৬ পৃঃ—১২ পংক্তি)। ইহা একটা সুবৃহৎ পরগণা। বর্তমানকালে ঢাকা জেলার অনেকাংশ এবং ফরিদপুর জেলার কিয়দংশ এই পরগণার অন্তর্নিবিষ্ট রহিয়াছে। ইহার উত্তরে ধলেশ্বরী নদী, পূর্ব সীমায় মেঘনা, পশ্চিমে পদ্মানদী এবং চন্দ্রপ্রতাপের অল্পাংশ, দক্ষিণে ইদিলপুর প্রভৃতি পরগণা। পদ্মানদীদ্বারা বিক্রমপুর দুই ভাগে বিভক্ত হইয়াছে। এই বিচ্ছিন্ন উত্তরাংশের নাম উত্তর বিক্রমপুর এবং দক্ষিণাংশ দক্ষিণ বিক্রমপুর নামে অভিহিত হইতেছে। খৃষ্টীয় নবম শতাব্দী পর্য্যন্ত এই প্রদেশ ‘সমতট আখ্যায় পরিচিত থাকিবার প্রমাণ পাওয়া যায়। সুবিজ্ঞ কানিংহাম, ফাগুসন ও ওয়াটর্স প্রভৃতি ঐতিহাসিকগণ সমতটের অবস্থান সম্বন্ধে যে সকল কথা বলিয়াছেন, ঢাকার ইতিহাস প্রণেতার মতে তন্মধ্যে ওয়াটসের উক্তিই সর্ববতোভাবে গ্রহণীয় । * তঁহার মতে ঢাকার দক্ষিণ এবং ফরিদপুরের পূর্বদিকস্থ ভূ-ভাগ সম হট নামে আখ্যাত ছিল । মতান্তরে, মেঘনা নদের পূর্ব-তীরবর্তী ভূ-ভাগ সমতট নামে আখ্যাত ছিল । শেষোক্ত মতই অধিকতর নির্ভরযোগ্য বলিয়া মনে হয় । উজ্জয়িনীর অধীশ্বর বিক্রমাদিত্যের নামানুসারে এই প্রদেশ বিক্রমপুব আখ্যা লাভ করিবার প্রবাদ আছে। দিগ্বিজয় প্রকাশ গ্রন্থে পাওয়া যায়,—“বিক্রম ভূপ বাসস্থাৎ বিক্রমপুর মতোবিদুঃ” । ইহা পূর্বেরাক্ত প্রবাদমূলক উক্তি বলিয়াই মনে হয় ; কিন্তু মহারাজ বিক্রমাদিত্য বিক্রমপুরে আগমনের প্রমাণ পাওয়া যাইতেছে না । বিপ্রকল্পলতিকা গ্রন্থের মতে সেন বংশীয় বিক্রম সেন বিক্রমপুর' নামের প্রতিষ্ঠাতা । উক্ত গ্রস্থে লিখিত আছে – “তদ্বংশে বিক্রম সেনো জাতঃ পরম ধাৰ্ম্মিকঃ । কৃতবান বিক্রমপুরীং স্বনাম্নাভিহিতং মুধাঃ ” বিপ্রকল্পলতিকা । গৌড়ের রাজস্যবর্গের মধ্যে বিক্রম সেনের নাম পাওয়া যায়। তন্ত্রবিভূতি, বিদ্বোন্মাদ তরঙ্গিণী এবং কথাসরিৎসাগর প্রভৃতি গ্রন্থে ইহার নামোল্লেখ আছে। বিক্রমপুরে সেন রাজগণের আধিপত্য দীর্ঘকাল প্রতিষ্ঠিত ছিল । সুতরাং বিক্রম সেনের নামানুসারে বিক্রমপুর’ নামকরণ হইবার সস্তাবনাই অধিক। পাল বংশের শাসনকালে বিক্রমপুরের নানাস্থানে বৌদ্ধ-বিহার ও চৈত্য স্থাপিত হইয়াছিল। সেই সকল স্থানের মধ্যে ব্ৰজযোগিনীর নাম বিশেষভাবে

  • ঢাকার ইতিহাস—১ম খণ্ড, উপক্রমণিকা, ১৬-১৭ পৃষ্ঠা ।