পাতা:শ্রীশ্রীচৈতন্যভাগবত - বৃন্দাবন দাস ঠাকুর .pdf/২১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দশম অধ্যায়। দশম অধ্যায়ের কথাসার এই অধ্যায়ে গঙ্গাদাস- পণ্ডিতের সভায় বিশ্বস্তরের বিষ্ঠাবিলাস, মুরারি-গুপ্তের সহিত কৌতুকবাদ, বল্লভাচাৰ্য্য-তনয়৷ লক্ষ্মীদেবীর পাণিগ্রহণ এবং পুত্র ও পুত্রবধূর আবির্ভাব-হেতু গৃহমধ্যে শচীদেবীর নানা-বৈভব-দর্শন বর্ণিত হইয়াছে। নিমাই-পণ্ডিত প্ৰত্যহ উষঃকালে সন্ধ্যাহিক-রুত্যাদি সমাপন করিয়া সমস্তশিষ্যগণের সহিত গঙ্গাদাস-পণ্ডিতের সভায় আসিয়া বসিতেন এবং তাহদের সহিত পক্ষ-প্ৰতিপক্ষ করিতেন। যাহারা নিমাইর নিকট গ্রন্থবিচারে ইচ্ছা করিত না, তাহাদিগের পক্ষ তিনি সমর্থনা করিতেন না এবং তঁহার অনুগত না হইয়া স্বতন্ত্রভাবে পাঠাভ্যাসের কুফল প্ৰদৰ্শন করিতেন। মুরারিগুপ্ত র্তাহার নিকট পাঠ অভ্যাস করেন। না দেখিয়া, একদা মুরারির সহিত নিমাই কিছু বঙ্গ করিবার অতিপ্ৰায়ে ‘ব্যাকরণ-চিন্তা অপেক্ষা রোগীর চিন্তাই গুপ্তের পক্ষে শোভনীয়” প্রভৃতি রহস্যোক্তিত্বারা তাহার ক্ৰোধোৎপাদনের চেষ্টা করিলেন। রুদ্র-অংশ মুরারি তথাপি ক্রুদ্ধ না হইয়া নিমাইকে তদীয় বিদ্যাবস্তা পরীক্ষা করিতে বলিলেন। প্ৰভু-ভৃত্যে পুর্বপক্ষ-উত্তরপক্ষ চলিল। স্বীয্য কৃপা-প্ৰভাবেই পরম-পণ্ডিত মুরারির ব্যাখ্যা শ্ৰবণ করিয়া প্ৰভু পরম সন্তোষের সহিত তদীয় অঙ্গে শ্ৰীপদ্মহন্ত অৰ্পণ করিলে মুরারির দেহ পরানন্দময় হইল। মুরারি ভাবিলেন,- “এমন অলৌকিক পাণ্ডিত্য প্ৰাকৃত-মানুষ্যে অসম্ভব ; সর্ব-নবদ্বীপে ইহার ন্যায় সুবুদ্ধিমান আর কেহ নাই, দেখিতেছি।’ প্ৰকাশ্যে কহিলেন, -“ঠাকুর, তোমার নিকটই আমি পুথি চিন্তা করিব।” এইরূপ রঙ্গ করিয়া নিমাই সাগণে গঙ্গাস্নানান্তে গৃহে আগমন করিলেন। নবদ্বীপবাসী ভাগ্যবান - “সঞ্জয়ের বহিগুহিঁ-চণ্ডীমণ্ডপে নিমাই-পণ্ডিত ছাত্ৰগোষ্ঠীর সহিত স্বীয় পাঠশালা সংস্থাপন করিয়াছিলেন এবং তথায় স্ব-ব্যাখ্যাস্থাপন, পরব্যাখ্যা-খণ্ডন প্ৰভৃতি নানা-লীলা প্ৰদৰ্শন করিতেন। অধ্যাপনা করিতে করিতে নিমাই এই বলিয়া স্বীয় বিদ্যাপতিত্বের অহঙ্কার করিতেন-‘কলিযুগে দেখিতেছি, সন্ধিপ্রকরণ-জ্ঞানশূন্য ব্যক্তিরই ‘ভট্টাচাৰ্য্য-উপাধি ! নববীপে অধুনা এরূপ পণ্ডিত কেহ নাই,- যিনি আমার ফাঁকির উত্তর প্ৰদান বা সমাধান করিতে সমর্থ।” এদিকে শচীমাতা নিমাইর বিবাহ-যোগ্য বয়স দেখিয়া তাহার বিবাহের নিমিত্ত সৰ্বদ চিন্তা করিতে লাগিলেন। দৈবক্রমে নবদ্বীপবাসী বল্লভূচাৰ্য্যনামক জনৈক সৎকুল সুশীল বিপ্ৰেয় মহালক্ষ্মীস্বরূপিণী কন্যা লক্ষ্মীদেবী একদিন স্নানোপলক্ষে গঙ্গাঘাটে স্বীয় প্ৰভু গৌরনারায়ণের দর্শন পাইয়া মনে মনে তঁহার পাদপদ্ম বন্দন করিলেন। ঈশ্বরোিচ্ছায় সেই দিনই বনমালী-নামক নবদ্বীপবাসী জনৈক ঘটক-বিপ্ৰ শচীমাতার নিকট বল্লভ-কন্যা লক্ষ্মীদেবীর সহিত নিমাইর বিবাহ-প্ৰস্তাব উত্থাপন করিলেন। কিন্তু শচীদেবীর নিকট বিশেষ কোন আশা বা মনোযোগ দেখিতে না পাইয়া বিপ্ৰ ক্ষুঃ-মনে ফিরিতেছিলেন, এমন সময় পথিমধ্যে নিমাইর সহিত তাহার সাক্ষাৎকার হইল। বিপ্রের নিকট সমস্ত কথা জানিয়া জননীর নিকট নিমাই স্বীয় বিবাহের সম্মতিসূচক ইঙ্গিত করিলেন। পরদিন বিপ্ৰকে ডাকাইয়া শচীমাত যাহাতে প্ৰস্তাবিত উদ্বাহ-কাৰ্য্য শীঘ্রই সম্পন্ন হয়, তাহার ব্যবস্থা করিতে বলিলেন । বিপ্ৰ সানন্দে তৎক্ষণাৎ গমন করিয়া কন্যাপক্ষকে এই সম্বন্ধ-বিষয়ে বরপক্ষের সন্মতি জ্ঞাপন করিলে বল্লভাচাৰ্য্যও অতিহৃষ্টচিত্তে তাহাতে সম্মত হইলেন, কিন্তু দারিদ্র্য-নিবন্ধন জামাতাকে পঞ্চ হরিতকী ভিন্ন আর কিছু যৌতুক প্ৰদান করিবার তাহার ক্ষমতা নাই, জানাইলেন। বর ও কন্যা, উভয় পক্ষের সম্মতিক্ৰমে শুভদিন স্থির হইল। বিবাহের পূর্বদিন বল্লভাচাৰ্য্য আসিয়া শুভলগ্নে জামাতা নিমাইর অধিবাস করাইলেন। মাঙ্গলিক বৈদিক ও লৌকিক অনুষ্ঠানাদি যথাবিধি সম্পাদিত হইল। পরদিবস শুভ-গোধূলি-সময়ে যাত্ৰা করিয়া সগোষ্ঠী নিমাই পণ্ডিত বল্লভালয়ে শুভবিজয় করিলেন এবং যথাবিধি লক্ষ্মীদেবীর পাণিগ্রহণ করিলেন। পরদিবস সন্ধ্যা-কালে নিমাই লক্ষ্মীদেবীর সহিত নিজ-গৃহে ফিরিয়া আসিলেন, শ্বাশ্রদেবী শচীমাতা বিপ্ৰপত্নীগণকে লইয়া মহালক্ষ্মী পুত্রবধূকে গৃহে বরণ করিয়া আনিলেন। তদবধি স্বীয় গৃহে অলৌকিক জ্যোতি ও সৌরভ প্রভৃতি নানাবিধ সম্পদ ও বৈভবের আবির্ভাব