পাতা:শ্রীশ্রীহরি লীলামৃত.djvu/১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

একদিন ভক্তগণ সঙ্গেতে করিয়া।
কীর্ত্তন করেন গোরা নাচিয়া নাচিয়া।।
মন্দিরের দ্বারে গিয়া ভক্তগণ সঙ্গে।
জগন্নাথে বেড়িয়া নাচেন নানা রঙ্গে।।
নাচিতে নাচিতে প্রবেশিল শ্রীমন্দিরে।
প্রেমে মত্ত জগন্নাথে প্রদক্ষিণ করে।।
নাচিতে নাচিতে প্রেমে পুলকিত অঙ্গ।
জগন্নাথ মুখচন্দ্রে পলিশ গৌরাঙ্গ।।
কীর্ত্তনান্তে গৌর বিনে সকলে অস্থির।
সবে বলে প্রভু কেন না হয় বাহির।।
অতি উৎকণ্ঠিত সবে উচাটন মন।
মন্দির ভিতরে সবে করিল গমন।।
কেহ বা বাহিরে কেহ মন্দির ভিতর।
সবে কাঁদে না দেখিয়া গৌরাঙ্গ সুন্দর।।
প্রভু না দেখিয়া সবে করে হাহাকার।
কেহ বা ধরায় পড়ে জ্ঞান নাহি আর।।
কেহ বা মুর্চ্ছিত হ’য়ে পড়েছে ধরায়।
কেহ বা চৈতন্য পেয়ে করে হায় হায়।।
কেহ বা জগবন্ধুর পদ ধরি কয়।
কেহ জগবন্ধু জগবন্ধু সে কোথায়।।
কেহ ধরে হস্ত পদ কেহ ধরে কোল।
মোদের গৌরাঙ্গ কোথা বোল বোল বোল।।
এক দৃষ্টে কেহ করে মুখ দরশন।
মুখ মধ্যে দেখে তার গেরুয়া বসন।।
বসনের কোন ধরি টানিতে লাগিল।
অরুন বসন তায় বাহির হইল।।
গৌরাঙ্গের ভক্ত যত জগন্নাথে কয়।
আহারে রাক্ষস তোরে কে করে প্রত্যয়।।
কে বলে ঈশ্বর তোরে কে করে বিশ্বাস।
গৌরাঙ্গ খাইলি ওরে দুরন্ত রাক্ষস।।
খাইলি গৌরাঙ্গ মন্দিরেতে পেয়ে একা।
ভাল যদি চাস তবে শ্রীগৌরাঙ্গ দেখা।।
শ্রী গৌরাঙ্গ লীলা সাঙ্গ শ্রীক্ষেত্র উৎকল।
রসনা রসনা ভরি হরি হরি বল।।


গৌর ভক্ত খেদ ও দৈবাদেশ

দীর্ঘ-ত্রিপদী

তুই খালি শ্রীগৌরাঙ্গ,  হইল রে লীলা সাঙ্গ,
আমরা এখন যাব কোথা।
যদি না গৌরাঙ্গ পাই,   প্রাণে আর কার্য্য নাই,
পাষাণে কুটিব গিয়া মাথা।।
মরিলে বাচিত প্রাণ,   পাবকে পাবকি ত্রাণ,
যে আগুনে দহিছে হৃদয়।
প্রহ্লাদ পুড়ে আগুনে,   শ্রীকৃষ্ণের নামগুণে,
জ্বলন্ত অনল নিবে যায়।।
গৌরাঙ্গ গৌরাঙ্গ বলে,   জ্বলি বিচ্ছেদ অনলে,
গৌর বিনে নিভেন্য অনল।
মরিলে মরণ নাই,   দগ্ধ যে হইনু ভাই,
কিসে মরি বাচিয়া কি ফল।।
বিরহে কাতর হ’য়ে,   জগন্নাথ কাছে গিয়ে,
বলে দেরে শ্রীগৌরাঙ্গ রায়।
গৌরাঙ্গ গ্রাসিলি যবে,   আমা দিকে গ্রাস সবে,
এত বলি মাথা পাতি দেয়।।
জগন্নাথের নিকটে,   কেহ কেহ মাথা কুটে,
কেহ বলে ওরে জগন্নাথ।
বক্ষে করাঘাত হানে,   কেহ বা উন্মত্ত মনে,
জগন্নাথে মারে মুষ্টাঘাত।।
দণ্ডাঘাত করাঘাত,   কেহ মুচড়ায় হাত,
উদরেতে কেহ মারে ভূষ।
কেহ পিছু পিছাইয়া,   ফিরে এসে আগুলিয়া,
নির্ভয় শরীরে মারে ঢুষ।।
ভক্তগণ দুঃখ হেরি,   জগন্নাথ কষ্ট ভারি,
সদয় হইয়া শ্রীচৈতন্য।
ভক্তগণে প্রবোধিতে,   জগন্নাথ দেহ হ’তে,
শূন্যবাণী কহে থেকে শূন্য।।
কেন জগন্নাথে মার,  আমার এ বাক্য ধর,
স্থির হও যাও নিজ ঘরে।
এ লীলা হইল সাঙ্গ,   আমার গৌরাঙ্গ অঙ্গ,
মিসে গেল আমার শরীরে।।
এবে না পাইবে দেখা,   গুরুজন শিষ্য শাখা,
স্থির কর সবে শোক মন।
কলির মধ্যাহ্নকালে,   করিব একটি লীলে,
তারপর পাবে দরশন।।

লঘু ত্রিপদী

মানুষে আসিয়া,   মানুষে মিশিয়া,
করিব মানুষ লীলে।
সেই ত সময়,   পাইবা আমায়,
পুনশ্চ মানুষ হ’লে।।