পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/১০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ষষ্ঠ অধ্যায় : বৈদ্য ও কায়স্থাদির কথা শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ১০৭ যেমন তাহার বাসস্থান পরিচিত, আখালিয়াতেও তদ্রুপ "চান্দরায়ের গৃধা” ও “রাজেন্দ্ররায়ের গৃধা" নামে দুই মহল্লা আছে। চান্দরায় ও রাজেন্দ্ররায় উভয়েরই মজুমদার উপাধি ও কানুনগো পদ ছিল। রাজেন্দ্ররায়ের আলম্বায়ন গোত্র ও পাল পদ্ধতি ছিল; সাধারণতঃ রাজরাম নামে খ্যাত ছিলেন। ইনি আখালিয়ার মজুমদারগণেব এক বংশে পূৰ্ব্ব-পুরুষ। আখালিয়ার মোনশী দেবীপ্রসাদ রায় ইউরোপীয় শিক্ষার্থীর জন্য Poly glotd Grammar প্রণয়ন করেন। ঐ গ্রামার পারস্য, আরবিক, হিন্দি, উর্দু, বাঙ্গালা ও ইংরেজী ভাষায় সঙ্কলিত হয়। এই গ্রন্থ বিদ্বজ্জন কর্তৃক সমাদৃত হইয়াছিল। দেবীপ্রসাদের ভ্রাতার পৌত্র বৰ্ত্তমান আছেন। আখালিয়াতেই “বিদ্যোদয়” প্রণেতা জয়গোপালের জন্ম। একখানা দানপত্র ইহাতে জ্ঞাত হওয়া যায় যে, তদীয় পিতামহ শোভারাম ১১৭০ বঙ্গাব্দে স্বীয় কুল দেবতা স্বগীয় মদনমোহনের নামে ৫/ হাল ভূমি দেবত্র প্রদান করেন। শোভারামের তিন পুত্র, –লালা জয়কৃষ্ণ, রামসুন্দর ওরফে জীবনকৃষ্ণ ও জয়নারায়ণ। তন্মধ্যে জয়কৃষ্ণ ইংরেজ শাসনের প্রারম্ভে ঢাকা জলালপুর জেলার কালেক্টারের দেওয়ান হইয়া প্রভূত অর্থ ও ভূসম্পত্তি অৰ্জ্জন করেন এবং বাড়ীর বহির্ভাগে এক শিব মন্দির প্রতিষ্ঠিত করেন, এই ভ্রাতৃত্ৰয়ের সৰ্ব্বকনিষ্ঠ জয় নারায়ণের জ্যেষ্ঠ পুত্রই জয়গোপাল। জয়গোপাল পারস্যভাষায় বুৎপন্ন হইয়া মোনশী নামে খ্যাত হন। আসাম ইংরেজাধীন হইলে জয়গোপাল তথায় গমন করেন, তিনি তত্ৰত্য জুডিসিয়াল কমিশনার মের্থী সাহেবের পেস্কার ছিলেন। মের্থী সাহেব এক বিদ্যালয় স্থাপন করিয়াছিলেন। ঐ বিদ্যালয়ের বালকবর্গকে উপদেশ দিবার জন্য মের্থ সাহেবের অনুরোধে “বিদ্যোদয়” গদ্যে রচিত হয়। যখন বিদ্যাসাগর মহাশয়ের গদ্য গ্রন্থগুলি প্রকাশিত হয় নাই, “বিদ্যোদয়” সেই সময়ে বিরচিত হইয়াছিল, সুতরাং সাহিত্যিক হিসাবে ইহার মূল্য আছে। জয়গোপাল পেস্কারী হইতে সেরেস্তাদারের পদ লাভ করেন ও পরে গোয়ালপাড়ার সদর আমীনের পদ প্রাপ্ত হন। ইহার প্রতিষ্ঠিত একটি সেতু ও এক শিবমন্দির অদ্যাপি আছে। লালা জয়কৃষ্ণ, জীবনকৃষ্ণ এবং জয়নারায়ণের বংশধরবর্গ সসম্মানে আখালিয়াতে বাস করিতেছেন ॥১০ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত পূৰ্ব্বাংশে (২য় ভাগ ৫ম খণ্ড ১ম অধ্যায়) ইংরেজ আমলের প্রথমকার পুণ্যাহ প্রথার কথা কথিত হইয়াছে, আখালিয়ার শ্রীযুক্ত গোকুলনাথ চৌধুরীর পূৰ্ব্বপুরুষই পুণ্যহে “পুষ্প-চন্দন" প্রাপ্ত হইতেন । আখালিয়ার সাহুবংশে ইহারাই শ্রেষ্ঠ, মৰ্যাদায়ও ইহারা শ্ৰেষ্ঠ । দুলালীর বৈদ্য বংশ "দুলালী দুৰ্ল্লভ স্থান, মঙ্গলচণ্ডীর অধিষ্ঠান" এই প্রবাদোক্ত দুলালী পরগণা ব্রাহ্মণ বৈদ্যাদির বাস হেতু তদঞ্চলে দুৰ্ল্লভ স্থানই হইয়াছিল। মোগল রাজত্বের প্রারম্ভে দাসপাড়া ও হুজুরী যামবাসী বৈদ্যবংশের আদিপুরুষ লক্ষ্মীনারায়ণ দাস স্বীয় গুরু পুরোহিতাদি সহ দুলালীতে আসিয়া বাস করেন। বিক্রমপুরের অন্তর্গত (অধুনা পদ্ম-গর্ভগত) নোয়াপাড়া নামক গ্রাম তাহাদের আদি বাসভূমি ছিল বলিয়া কথিত আছে। দাসপাড়া নিবাসী ভট্টাচাৰ্য্যগণের আদি পুরুষ ধরাধর মিশ্র লক্ষীনারায়ণ দাসের গুরু ও পুরোহিত ছিলেন । হুগলী জিলার অন্তঃপাতী গুপ্তিপাড়া গ্রাম হইতে গুপ্তপাড়া ও পুরকায়স্থপাড়া নিবাসী গুপ্তগণের আদি পুরুষ সহস্রাক্ষ গুপ্ত আগমন করেন এবং লক্ষ্মীনারায়ণ দাসের কন্যাকে বিবাহ ৯. শ্রীহট্রেব ইতিবৃত্ত পূৰ্ব্বাংশ ২য় ভাগ ২য় খণ্ড ৪র্থ অধ্যায় দ্রষ্টব্য। ১০. উকীল শ্ৰীযুক্ত অম্বিকাচরণ দাস, এম,এ,বি,এল, প্রভৃতি জীবনকৃষ্ণের প্রপৌত্র স্থানীয়।