পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/১১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ষষ্ঠ অধ্যায় : বৈদ্য ও কায়স্থাদির কথা শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ১১৫ কিশোরী-ভজন মতানুবৰ্ত্তী রঘুনাথ ভট্টাচার্য্যের কাছে উপদিষ্ট হন। ইনি মহলালের প্রসিদ্ধ শ্যামকিশোর ঘোষের কন্যার পাণিগ্রহণ করিয়াছিলেন। ৪র্থ ভাগে জীবনী প্রসঙ্গে এই বিষয় কথিত হইবে। ইহার পুত্রের নাম গোবিন্দ চাদ অধিকারী, তৎপুত্র শ্ৰীযুত গোপেন্দ্র কুমার জীবিত আছেন। পরগণা-গোধরালি গোধরালি পরগণার পুরকায়স্থগ্রাম তত্ৰত্য পুরকায়স্থ বংশীয়গণের মৌলিকত্ব প্রচার করিতেছে। কথিত আছে, রামচন্দ্র দেব ও শ্যামরাম দেব স্থানান্তর হইতে তথায় গিয়া বাস করেন ও তত্ৰত্য পাটওয়ারি নিযুক্ত হন; এই দুইজনই তথাকার আদি পুরকায়স্থ । ইহাদের পরবত্ত বাসুদেব পুরকায়স্থ এক কীৰ্ত্তিমান ব্যক্তি। তাহার কৃত একটি জলাশয় শ্রীহট্ট- ফেঞ্চুগঞ্জ রাস্তার ধারে “বাসুদেব-তালাব” নামে খ্যাত থাকিয়া এখনও পথিককে জলদান করিতেছে। দক্ষিণাঞ্চলে যাওয়ার সুবিধা কল্পে তিনি যে খাল কৰ্ত্তন করিয়া দিয়াছিলেন, শ্রীহট্ট শহর হইতে বালাগঞ্জ প্রভৃতি স্থানে যাওয়ার পক্ষে তাহাই সুগম পন্থা। বাসুদেবের ভ্রাতা কেশবরামের নামে গোধরালি পরগণার ৮নং এবং ৯নং তালুকের নাম হয়। বাসুদেবের পুত্র গোকুলচান্দও পিতার ন্যায় সৰ্ব্বসাধারণের হিতকর কার্য্য করিয়া যশস্বী হইয়াছিলেন। তৎকালে শহরে যাইবার ভাল পথ ছিল না, গোকুলচান্দ সে অসুবিধা দূর করেন—“গোকুলচান্দের জাঙ্গাল” আজও তাহার কীৰ্ত্তি প্রচার করিতেছে। গোকুলানন্দের পুত্র গোলাবচান্দ নিজ বাটীতে স্বগীয় শ্রীশ্রীরাধাকৃষ্ণ বিগ্রহ স্থাপন করেন। আজ কাল শ্রীবিগ্রহ প্রতিষ্ঠার বড় গুরুত্ব না থাকিলেও পূৰ্ব্বেই ইহা বিশেষ গুরুতর ও পুণ্যকাৰ্য্য বলিয়া অবধারিত ছিল । অপর পুরকায়স্থ বংশ এই পুরকায়স্থ বংশীয়গণ ব্যতীত গোধরালিতে আরও এক পুরকায়স্থ বংশ বিদ্যমান। গোধরালির এই দ্বিতীয় পুরকায়স্থদিগের পূৰ্ব্বপুরুষ যে বৈদ্য জাতীয় ছিলেন, তাহার বাণীবেজ নাম হইতে তাহা প্রতীয়মান হয়। বাণীবেজ বংশীয়গণ মৌদগুল্য গোত্রীয়, ইহারা প্রথমতঃ আখালিয়াতে ছিলেন । আখালিয়াতে এখনও "বেজের টীলা" বলিয়া একটা স্থান আছে। তথা হইতে তদ্বংশীয় রমাবল্লভ গঙ্গানগরে গিয়া বাস করেন; তিনিই পূৰ্ব্বোক্ত গোকূলচন্দের কন্যা বিবাহ ক্রমে, তথা হইতে শ্বশুরের গ্রামে বাসবাটী নিৰ্ম্মাণ করিয়া লইয়াছিলেন ॥২৪ দিগলী এইরূপ দিগলীতে “কবের দীর্ঘী" “করের দেউড়ী" “করেরবাড়ী" ইত্যাদির চিহ্নাদি দৃষ্টে বোধ হয় যে কর বংশীয়গণই তথাকার আদি অধিবাসী । দিগলীর সংলগ্ন শ্রীমানপুরে ধর বংশীয়গণ ছিলেন। দশহাল ব্যাপিয়া তাহাদের খানেবাড়ী ছিল; তাহাদের বৃহৎ দীঘী ইত্যাদির চিহ্ন দৃষ্টি বোধ হয় যে, তাহারা এক সময় কম ক্ষমতাশালী ছিলেন না। ইহাদের সন্নিকটেই কাশ্যপগোত্রীয় দাস বংশীয়গণ ছিলেন। দাস বংশীয়ের আদি পুরুষ কালিদাসের নামে তাহার বসতি-স্থান কালিদাসপাড়া বলিয়া খ্যাত হয়। এই বৈদ্য বংশীয়গণ কর্তৃকই গয়ার পরগণার সৃষ্টি হইয়াছিল বলিয়া কথিত আছে। ২৪. মেহতাজন শ্রীমান মহেন্দ্ৰ নাথ দে পুরকায়স্থ হইতে প্রাপ্ত।