পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/১২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সপ্তম অধ্যায় : মোসলমান বংশ বর্ণন শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ১২৩ বহুকালের প্রাচীন মাদ্রাসার রক্ষাকল্পে মুফতি বংশীয়গণ যে কৃতিত্ব ও শিক্ষানুরাগ প্রদর্শন করিয়াছিলেন, ইংরেজ আমলে একটি ইংরেজী এনট্রেন্টস স্কুল স্থাপনে তাহারই প্রকৃষ্ট পরিচয় প্রদত্ত হইয়াছিল। এই স্কুল “মুফতি স্কুল" নামে খ্যাত ছিল; মুফতি নুরউদ্দীন ১৮৭৬ খৃষ্টাব্দের ১লা জানুয়ারীতে উহা স্থাপন করেন। পরবৎসর আগষ্ট মাসে লর্ড বিশপ বাহাদুর শ্রীহট্টে আসিলে, এই স্কুল পরিদর্শনে তিনি বিশেষ সন্তুষ্ট হইয়াছিলেন। এই স্কুল পরে অন্যের হস্তে গিয়া শ্রীহট্ট নেশনেল স্কুল রূপে পরিণত হয় । ডিপুটী কমিশনার জনসন সাহেবের চেষ্টায় শিক্ষানুরাগী মুফতি নুরউদ্দীন ১৮৮৭ খৃষ্টাব্দের ১৭ জুলাই হইতে সদরের স্কুল সমূহের সবইনিস্পেক্টর নিযুক্ত হন। তিনি বহুকাল সদর কোমিটার মেম্বর ও শ্রীহট্ট মিউনিসিপাল কমিশনার ছিলেন । ফলতঃ সদরের মোসলমান সমাজে ইহাদের মর্য্যাদা সামান্য নহে। প্রথমতঃ হজরত শাহজলালের অনুচর স্বরূপে ইহারা সম্মাননীয়, তৎপর দরগার খাদিম স্বরূপে তাহাদের সম্মান সৰ্ব্বসম্মত, এইজন্য বিভিন্ন সনন্দে তাহারা ১৮৪/০ হাল ভূমি প্রাপ্ত হইয়াছিলেন। দ্বিতীয়তঃ পারস্য শিক্ষার উৎসাহ দাতা রূপে ইহারা চিরদিন শ্রীহট্টবাসীর ধন্যবাদের পাত্র, এইজন্য বিভিন্ন সনদে তাহারা ৫৪২/০ হাল ভূমি প্রাপ্ত হইয়াছিলেন। তৎপরে এদেশবাসীগণের মধ্যে ইংরাজী এনট্রেন্স স্কুল স্থাপন দ্বারা দেশীয়দের শিক্ষার পথ প্রশস্ত করেন। তৃতীয়তঃ মুফতি বা মোহাম্মদীয় আইনের মীমাংসক স্বরূপে এবংশের প্রাধান্য কম বলা যায় না;—এইজন্য তাহারা ৩৯৪/০ হাল ভূমি প্রাপ্ত হইয়াছিলেন। মৌলবী পরিবার শহরের আর একটি বংশের উল্লেখ করিব, কাজির বাজারস্থিত মৌলবী পরিবারের কথাই এস্থলে নির্দেশই করিতেছি। ইহাদের পূৰ্ব্ব পুরুষ ত্রিপুরাবাসী ছিলেন। মৌলবী মোহাম্মদ ইদ্রিশ খা শ্রীহট্টের সবজজ পদে নিযুক্ত হইয়া আগমন করেন ও বহুবৎসর এই পদে নিযুক্ত থাকিয়া নীলামে প্রভূত ভূসম্পত্তি ক্রয় করতঃ শ্রীহট্টের অন্যতম জমিদাররূপে পরিণত হন এবং এই স্থানেই বাড়ী নিৰ্ম্মাণ ক্রমে এখানকার অধিবাসী হইয়া পড়েন। তাহার দুই পুত্র, মৌলবী আব্দুল কাদির ও মৌলবী আব্দুর রহমান। আব্দুর রহমান বিলাস-সাগরে মগ্ন হইয়া বহু সম্পত্তি নষ্ট করেন। আব্দুল কাদির সাহেব কাজি আদালতে কিছুকাল বিচারক ছিলেন। আব্দুল কাদের সাহেবের মৃত্যুর পর সম্পত্তি কোর্ট অব ওয়ার্ডের অধীন হয়। আব্দুল কাদির সাহেবের একমাত্র পুত্র মৌলবী মোহাম্মদ এহিয়া খান বাহাদুর এক্ষণে ঐ পরিবারে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি। গবর্ণমেণ্ট এ পরিবারে বিনাপাশে বন্দুক রাখিবার ক্ষমতা দিয়া সম্মানিত করিয়াছিলেন। পরগণা-জলালপুর মকদুম রহিম উদ্দীন হজরত শাহজলালের অন্যতম অনুষঙ্গী ছিলেন। তিনি শহর হইতে জলালপুরে ধৰ্ম্ম প্রচারার্থ গমন করিয়া হস্তের "আসা" (লাঠি বিং) স্থাপন করিয়াছিলেন। কথিত আছে যে তাহাতে তথায় একটি বটবৃক্ষের উদ্ভব হয় এবং তাহা অদ্যাপি আছে। জলালপুরের দরগার ফকিরগণ এই গাছের পাতা সংগ্রহ পূৰ্ব্বক স্থানে স্থানে গমন করিয়া মোসলমানগণ মধ্যে