পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/১২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ব্রাহ্মণ-বিভাগ প্রথম অধ্যায় পঞ্চখণ্ডের ব্রাহ্মণগণ নামতত্ত্ব করিমগঞ্জ সবডিভিশনের উত্তরে জয়ন্তীয়া পাহাড়, পূৰ্ব্বে কাছাড় জিলা, দক্ষিণে লুশাই ও পাৰ্ব্বত্য ত্রিপুরা, পশ্চিমে দক্ষিণ শ্রীহট্ট ও উত্তর শ্রীহট্ট সবডিভিশন করিমগঞ্জ সবডিবিশন ১৭৭৮ খৃষ্টাব্দে স্থাপিত হয়, যে স্থানে বৰ্ত্তমানে সবডিভিশনেল শহর সংস্থাপিত হইয়াছে, পূৰ্ব্বে তথায় কিছুই ছিল না। নটীখালের পূৰ্ব্বতীরে,—নটীখাল কুশিয়ারা-সঙ্গম স্থল হইতে প্রায় তিন পোয়া মাইল দক্ষিণে তখন একটি বাজার মাত্র ছিল, এই বাজার স্থানীয় মিরাশদার মোহাম্মদ করিম চৌধুরী কর্তৃক স্থাপিত বলিয়া করিমগঞ্জ নামে খ্যাত হইয়াছিল। হেমন্তে নদীখালে জল থাকে না বলিয়া অসুবিধা বিধায় এই বাজার ১২৭২ বঙ্গাব্দে বৰ্ত্তমান স্থানে স্থানান্তরিত হয়। করিমগঞ্জ সবডিভিশনে লাতু একটি পরিজ্ঞাত স্থান, এই স্থানে রাজস্ব সংগ্রহের একটি কেন্দ্র স্থাপিত হইয়াছিল, লাতুর বাজারের সন্নিকটবৰ্ত্তী মাল-গড়ের টালাতে গৃহাদি নিৰ্ম্মিত হইয়াছিল, সংগৃহীত রাজস্বাদি তথায় রক্ষিত হইত; তথায় বহুদিন যাবৎ একটা মুন্সেফ কোর্টও ছিল, পরবত্তীকালে এই কোর্ট ফেঁচুগঞ্জে উঠিয়া যায়। করিমগঞ্জ সবডিভিশন স্থাপনের প্রাক্কালে ফেচুগঞ্জ হইতে উঠাইয়া আনা হয়। বৰ্ত্তমান করিমগঞ্জ বাজারের ঠিক উত্তরে নদীর পরপারে জকিগঞ্জ নামক স্থানে তখন ইহা স্থাপিত হইয়াছিল। তাহার পরে, নটীখালের পরপারে ফৌজদারী কাছারী গৃহাদি নিৰ্ম্মিত হইলে মুসেফ কোর্টও জকিগঞ্জ হইতে এথায় চলিয়া আসে। করিমগঞ্জে ষ্টিমার ও রেলওয়ের সংযোগ থাকায় ইহা ক্রমশঃ উন্নতির পথে ধাবিত হইতেছে । করিমগঞ্জ সবডিভিশনে ৪০টি পরগণা আছে। সবডিভিশনের আয়তন ও জনসংখ্যাদি এবং পরগণা সমূহের নামাদি বিবরণ প্রথম ভাগে বিবৃত হইয়াছে। অধিবাসীবর্গ মধ্যে যাহাদের কীৰ্ত্তিকথা প্রসঙ্গতঃ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্তের দ্বিতীয় ভাগে বর্ণিত হয় নাই, এস্থলে তাহাই লিপিবদ্ধ হইবে। আমরা পঞ্চখণ্ডের স্বগীয় বাসুদেব সংসৃষ্ট কাহিনীর সহিত এই খণ্ড আরম্ভ করিলাম । দেব-লীলা প্রথম ভাগের ৯ম অধ্যায়ে স্বগীয় বাসুদেবের সচিত্র বিবরণ প্রকাশিত হইয়াছে; বলা হইয়াছে যে, জয়ন্তীয়া রাজ কৰ্ম্মচারী দুর্গাদলইর পুষ্করিণী খননকালে বাসুদেব বিগ্রহ পাওয়া গেলে, বিজয়কৃষ্ণ পাঠক নামক এক ধৰ্ম্মাত্মা ব্রাহ্মণকে উক্ত বিগ্রহ প্রদত্ত হয়। বিজয় কৃষ্ণ পরশর গোত্রীয় ছিলেন। বাসুদেবের সেবাধিকারী বিপ্র বর্গ তাহারই বংশধর । বিজয় কৃষ্ণের দুইটি পুত্র ছিল। একদা এক ব্যক্তি বাসুদেবের উদ্দেশ্যে দুইটি সুপক্ক আম্র প্রদান করিল: বালকদ্বয় সুপক্ক আম্রের লোভ সংবরণ করিতে না পারিয়া দেবোদেশে প্রদত্ত আম্র দুইটি ভক্ষণ করিল। সেই আম্র ভক্ষণের পর তাহাদের পেটে অসুখ জনিল, আর তাহাতেই তাহাদের উভয়ের মৃত্যু হইল। পুত্রদ্বয় প্রাণ ত্যাগ করিলে পাঠকপত্নী ভূপতিত হইয়া ক্ৰন্দন করিতে লাগিলেন। হায় দেবসেবার কি এ ফল? আম্র ভক্ষণে মৃত্যু হইবে কেন? আম্রতো আর শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত(উত্তরাংশ-তৃতীয় ভাগ)-৯