পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/১৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রথম অধ্যায় : পঞ্চখণ্ডের ব্রাহ্মণগণ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ১৩১ এই দুই জনের ছয়টি পুত্ৰজাত হয়, তাহাদের বংশধরগণই বাসুদেবের সেবাধিকারী: বাসুদেবের যাহা কিছু আয়, ইহারাই তাহা প্রাপ্ত হন। নবাব শুকুরুল্লা খা বাহাদুরের সময়ে বাসুদেবের সেবা পরিচালনার জন্য ৪৫ টাকা বৃত্তি নিৰ্দ্ধারিত হয়। সেই সময় হইতেই রথযাত্রা ও বারুণীর মেলা আরম্ভ হয়। এই বংশীয় হরিনাথ চক্রবত্তীর পুত্ৰ শহুদেব, তৎপুত্র শুকদেব, তাহার পুত্র বাসুদেব, ইহার পুত্র চণ্ডীচরণ তর্কভূষণ। ইনি ত্রিপুরাধিপতির পণ্ডিত-সভায় প্রায়শঃ যাইতেন, তথায় তাহার বার্ষিক ৫০ টাকা বৃত্তি অবধারিত ছিল। ইহার জ্যেষ্ঠ পুত্র রমাকান্ত জ্যোতিষজ্ঞ পণ্ডিত ছিলেন, এবং চতুর্থ পুত্র অভয়াচরণ বহুদশী চিকিৎসক ছিলেন। চণ্ডীচরণের ৩য় পুত্রের নাম চন্দ্রকান্ত, ইহার পুত্র শ্ৰীযুত নীরদ চন্দ্র চক্রবর্তী হইতে এই বংশের কাহিনী প্রাপ্ত হওয়া গিয়াছে। অনিপণ্ডিতের পরাশরগণ পঞ্চখণ্ডের নাম পূৰ্ব্বাংশে করা গিয়াছে। পঞ্চখণ্ডই সাম্প্রদায়িক বিপ্রবর্গের আদি নিকেতন। সম্প্রতি (১৩২০ বাং) পঞ্চখণ্ডে ভাস্কর বর্মার যে তাম্রশাসন আবিষ্কৃত হইয়াছে, পঞ্চখণ্ডের সহিত তাহার সম্বন্ধ না থাকিলেও এ স্থানে উহা আসিবার কারণ ইহাই অনুমিত হয় যে, তাম্রশাসন প্রাপক বা তদীয় উত্তরাধিকারী পূৰ্ব্বকালে এস্থলে আসিয়া বাস করিয়াছিলেন ২ মিথিলাগত পঞ্চবিপ্রের বাসভূমি পঞ্চখণ্ড অতি প্রাচীন ব্রাহ্মণ অধুষিত ভূমি। পঞ্চব্রাহ্মণের আগমনের পূৰ্ব্বে এ স্থলে টেঙ্গরী নামক কুকি সম্প্রদায় বাস করিত, তাহা বলা গিয়াছে। উক্ত কুকি সম্প্রদায়ের বাস হেতু পঞ্চখণ্ড "টেঙ্গইর” নামে খ্যাত ছিল, সেই পুরাতন নামের স্মৃতি এতকাল পরেও জনশ্রুতি বিস্তৃত হয় নাই ৩ মিথিলাগত পঞ্চ বিপ্ৰ-বংশীয়দের মধ্যে পরাশর গোত্রীয়গণ অন্যতম। পঞ্চখণ্ডে পরাশর গোত্রীয় সাম্প্রদায়িক আর এক বংশীয় ব্রাহ্মণ আছেন; পঞ্চখণ্ডের অনিপণ্ডিত নামক স্থানে জন্ম হইয়াছিল, তাহার নামানুসারে তদীয় বসতি স্থান “অনিপণ্ডিত" নামে খ্যাত হয় এবং তদ্বংশীয়গণ তদবধি “পণ্ডিত” এই সাধারণ উপাধি ধারণ করিয়া আসিতেছেন । “অনিপণ্ডিত” গ্রামের মহাত্মা অনিপণ্ডিত দেবকল্প সিদ্ধ পুরুষ ছিলেন। পরবর্তীকালেও এই বংশে শুকদেব সিদ্ধান্ত, রাধাকান্ত ন্যায়ভূষণ, রতিকান্ত ন্যায়ভূষণ, রতিকান্ত বিদ্যালঙ্কার প্রভৃতি খ্যাত নামা পণ্ডিতবর্গের উদ্ভব হয়। এই বংশে তীক্ষ্ণধী শ্যামানন্দ ভট্টাচার্যের জন্ম হয়। একদা জনৈক বৈদেশিক পণ্ডিতঃ হেড়ম্বেশ্বর কৃষ্ণচন্দ্র নারায়ণেরণ সভায় উপস্থিত হইয়া তিনটি প্রশ্নের উত্তর চাহেন, উত্তরটি একটি বাক্যে হইবে। শ্যামানন্দ পূৰ্ব্বে কাছাড় রাজের সভাপণ্ডিত ছিলেন, তখন অবসর গ্রহণে বাড়ী আসিয়াছেন। রাজসভায় অন্যান্য পণ্ডিতবর্গ প্রশ্নের নানারূপ উত্তর দিতে লাগিলেন, কিন্তু প্রকৃত উত্তর হইল না। তখন শ্যামানন্দকে দেশ হইতে ডাকিয়া নেওয়া হইল, তিনি সভায় উপস্থিত হইয়া প্রশ্নটি শুনিতে চাহিলে পণ্ডিত বলিলেনঃ– ২. বিজয়া পত্রিকা-আষাঢ় ১৩২০ বাংলা । ৩. পঞ্চখণ্ড উৎকৃষ্ট আনারসের জন্মভূমি; ঐ আনারস পূৰ্ব্বে “টেঙ্গর আনারস" নামে খ্যাত ছিল। ইদানীং "জলডুবি আনারস" বলিয়া কথিত হয়। সাধারণ লোকে "আনারস" অথবা "বিরতুম" বলে। আশ্চর্যের বিষয় যে আনারস নামটি ব্ৰেজিল দেশীয়, ইহার লেটিন নাম আনানাস সেটাইবা । ৪. উক্ত পণ্ডিত পূৰ্ব্বে নবদ্বীপাধিপতি কৃষ্ণচন্দ্রের সভাপতি ছিলেন বলিয়া কথিত আছে। ৫. মতান্তরে গোবিন্দচন্দ্র নারায়ণ ।