পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

[পনের] পূৰ্ব্বেই বলিয়াছি, সকলের সাহায্যে "ইতিবৃত্ত" সৰ্ব্বাঙ্গসুন্দর ও পূর্ণাঙ্গ করিতে আমাদের একান্ত ইচ্ছা থাকিলেও, আশা সম্পূর্ণ হয় নাই। অত্রাবস্থায়ও সামান্য যাহা করা হইয়াছে তজ্জন্য আমরা পত্রিকা-সম্পাদক ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সহানুভূতি সূচক প্রশংসাবাদ প্রাপ্ত হইয়া প্রকৃতই উৎসাহিত হইয়াছি; এবং এমনও অবগত হইয়াছি, যে ইতিমধ্যেই শ্রীহট্টের ইতিবৃত্তের অনুকরণে আরও দুএক জেলার ইতিহাস রচিত হইয়াছে। “এমপায়ার” নামক সুবিখ্যাত ইংরেজী দৈনিক পত্রিকার সম্পাদক মহোদয় সমালোচনা স্থলে স্পষ্টতঃই শ্রীহট্টের ইতিবৃত্তের বিশিষ্টতা খ্যাপন করিয়াছেন। "ঐতিহাসিক চিত্র" নামক পত্রিকায়ও এইরূপই লিখিত হইয়াছে। এতদ্বতীত “প্রবাসী" “সাহিত্য-সংবাদ", "অমৃত বাজার পত্রিকা" "আনন্দ বাজার পত্রিকা” “বঙ্গবাসী” “বসুমতী” “হিতবাদী” “ইণ্ডিয়ান মেসেঞ্জার" “পল্লীবাসী” "শান্তিকণা” “ঢাকা রিভিউ ও সম্মিলন” প্রভৃতি বহুতর পত্রিকার সম্পাদক মহোদয়গণ আপনাদের সহৃদয়তা সূচক সমালোচনা প্রকাশ করিয়াছেন; তজ্জন্য তাহাদিগকে ধন্যবাদ দিতেছি । আমাদের পরিদর্শকও এতনিমিত্তে ধন্যবাদের পাত্র। যে সকল মহানুভব ব্যক্তি পত্রদ্বারা আপনাদের অভিমত জ্ঞাপন করিয়াছেন, তাহারাও আমাদের কৃতজ্ঞতার ভাজন গ্রন্থশেষে ঐ সকল সমালোচনা অংশতঃ উদ্ধৃত করা হইল । দীর্ঘকালের চেষ্টা ও প্রায় পঞ্চদশ বৎসরের পরিশ্রমে শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত সম্পূর্ণ প্রকাশিত হইল; ইহাতে অবশ্যই আনন্দিত হইবার কথা ছিল। কিন্তু কয়েকটি ঘটনা মনে হইয়া আজ সে সুখ পূর্ণাঙ্গে উপভোগ করিতে পারিতেছি না। ইতিবৃত্তের কপি লইয়া যখন সৰ্ব্বপ্রথম কলিকাতায় যাইতে হয়, সেই সময় মদীয় সহধৰ্ম্মিণী পীড়িত হইয়া পড়েন; আমার আগমনাপেক্ষায় তাহার সুচিকিৎসার বিশেষ বন্দোবস্ত হইতে পারে নাই; সেই রোগেই আটমাসের একটি শিশুপুত্র রাখিয়া তিনি পরলোকগামিনী হন। “কুসুমাঙ্গ"- সেই মাতৃহীন শিশুটিকে তখন বুকে তুলিয়া লইলাম। কিছুদিনের জন্য ইতিবৃত্ত মুদ্রণের তত্ত্বাবধান স্থগিত রহিল- শিশু লইয়াই ব্যস্ত থাকিতে হইল । সেই সময় কনিষ্ঠ সহোদর অনিরুদ্ধচরণ চৌধুরী-ইতিবৃত্তের জন্য যে সৰ্ব্বপ্রথম উপকরণ (লাখাইর ভবাণী দত্তের লিপি) সংগ্ৰহ করিয়া দিয়াছিল, কলিকাতায় যাওয়ার জন্য উত্তেজিত করিতে লাগিল, স্বদেশের কীৰ্ত্তি প্রচার বিষয়ে তাহার অত্যগ্রহ দর্শনে সুখী হইয়া কলিকাতায় চলিলাম; কিন্তু হায়, জানিলাম না যে ইহার তাহার সহিত শেষ দেখা! বিদ্যুৎবাৰ্ত্তায় ব্যাধি সংবাদ পাইয়া তৎক্ষণাৎ চলিয়া আসিলাম, কিন্তু অনিরুদ্ধকে পাইলাম না, সে তখন দুঃখময় সংসারের বন্ধনমুক্ত হইয়া চলিয়া গিয়াছে! মাত্র পাঁচটি মাসের মধ্যে এই দুইটি দারুণ শোক কেবল ঐ কুসুমাঙ্গের ফুল্ল মুখ চাহিয়া ভুলিতে চেষ্টা করিলাম। মায়ার দাস আমরা, মায়াতীত যিনি, তাহার চরণানুসন্ধান না করিয়া আরো মায়ামোহিত হইতেই চাহি। ফলে কুসুমাঙ্গের মাতৃস্থলবর্তী হইয়া পড়িলাম। যখন তাহার বয়স এক বৎসর উত্তীর্ণ হইয়া গিয়াছে, তখনও সে অমৃতভাষে পিতাকেই "মা" বলিয়া ডাকে- একতিলও তাহাকে ছাড়িয়া থাকিতে চাহে না। এ দিকে কঠোর কৰ্ত্তব্য পড়িয়া রহিয়াছে, ইতিবৃত্তের মুদ্রণ শেষ করিতে কলিকাতায় যাইতে হইবে। কৰ্ত্তব্য আর স্নেহ, উভয়েই মহাযুদ্ধে শোষোক্তই পরাজিত হইল- কলিকাতায় চলিলাম। যাত্রা কালের সেই চিত্রটি এখনও মন হইতে মুছে নাই, বাটীর সম্মুখে অন্যের কোলে থাকিয়া ফুল্ল কুসুমের ন্যায় সে আমার পানে চাহিয়া রহিল। তখন অল্পদিন সে "বাবা" বলিতে শিখিয়াছে। কিছুদূরে