১৪২ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত তৃতীয় ভাগ-দ্বিতীয় খণ্ড এই রাম মিশ্র কে? পঞ্চখণ্ডের মিশ্র বংশীয়েরা বলেন যে, রামমিশ্ৰই পূৰ্ব্বকথিত রামচন্দ্র বিদ্যালঙ্কার। রামচন্দ্র আধুনিক ব্যক্তি হইলেও যে বংশে জ্ঞানবর ও কল্যাণবরের উদ্ভব হয়। সেই “মহাগোষ্ঠিতে” তাহারও উৎপত্তি হইয়াছিল এবং কবি রামানন্দ “পুণ্যশরীর" ইত্যাদি বাক্যে পিতৃমহিমাই কীৰ্ত্তন করিয়াছেন। জ্ঞানবরের বংশ সম্বন্ধীয় এসব কথা ব্যতীত কল্যাণবর সম্বন্ধে আর এক সংবাদ পাওয়া যায়। তিনি "চৌদ্দশত পাছত” (১৪৭৫) শকে পুনঃ পূৰ্ব্বদেশে স্ত্রীপুত্রসহ গমন করিয়াছিলেন। তাহার বংশে শ্রীরূপ ও রামানন্দ নামে দুই ব্যক্তির জন্ম হয়; ইহার একজন গ্রন্থকৰ্ত্তা রামানন্দের “ইষ্টদেব” ছিলেন। কিন্তু কল্যাণবরের বংশীয়গণ এক্ষণে কোথায়? থাকিলে কোথায় আছেন?৩৩ পরবর্তী কীৰ্ত্তি কথা রসতত্ত্ব বিলাসের কথা উপলক্ষে প্রাসঙ্গিকভাবে এসকল কথা বলিতে হইয়াছে। পূৰ্ব্বে বলিয়াছি যে ধনমিশ্র স্বীয় পিতামহের সনন্দমূলে ৪ চারি টাকা বৃত্তি বাহাল করাইয়াছিলেন। ধনমিশ্রের পুত্র গোকুলমিশ্র, বিশ্বনাথ মিশ্রের একযোগে পূৰ্ব্বোক্ত নবাব বশারত খা বাহাদুর হইতে উক্ত ৪ টাকা বৃত্তি এবং ১০/০ হাল ভূমি ও একবাড়ী নিষ্কর ভোগের জন্য এক সনন্দ প্রাপ্ত হন। উক্ত ভূমিবাড়ী তাঁহাদের দানপ্রাপ্ত ছিল ৩৪ শ্রীহট্টের কালেক্টর সাহেবের রুবকারিতে জানা যায় যে এই ভূমিতে জমা ধাৰ্য্যের জন্য ১৮৪২ খৃষ্টাব্দের ১১ই মে সরকার বাহাদুর বাদীতে এক মোকদ্দমা উপস্থিত করা হয় ও শ্রীহট্টের কালেক্টর মিঃ এ, বি, বিডউয়েল সাহেবের বিচারে তাহা “ডিসমিস" হইয়া নিষ্কর বাহাল থাকে। তদ্ব্যতীত কাপ্তান ফিশার সাহেবের কাছাড় সম্বন্ধীয় রুবকারিতে জানা যায় যে, গোকুলমিশ্র, মহারাজ কৃষ্ণ চন্দ্র নারায়ণ হইতে সিদ্ধিপুরে (সিদ্ধেশ্বরে) কতক নিষ্কর ভূমি প্রাপ্ত হইয়াছিলেন। গোকুল মিশ্রের পুত্র আনন্দ মিশ্র কাছাড়রাজ-সরকারে উকীল ছিলেন এবং ঐ ভূমি ভোগ করিতেন। কাছাড়রাজ্য ইংরেজাধিকার ভুক্ত হইলে উক্ত ভূমিতে গবৰ্ণমেণ্ট পক্ষে করধাৰ্য্যের জন্য জরিপ হইলে, তদুপলক্ষে এক মোকদ্দমা উপস্থিত হয়, তখন কৃষ্ণকান্ত বিদ্যামণি পৈতৃক সনন্দ প্রদর্শন করিলে, ১৮৩৪ খৃষ্টাব্দের ২১শে মার্চ উক্ত ব্ৰহ্মত্র নিষ্কর বাহাল থাকার আদেশ হয়। ৩৩. যদি বলা যায় যে, কল্যাণবর ১৪৭৫ শকে কাছাড়ের পূৰ্ব্বে মণিপুরেই গিয়া ধৰ্ম্মপ্রচার করিয়া থাকিবেন; তবে তাহা প্রকৃত কথা হয় না। মণিপুরে ঢাকাদক্ষিণের রামশিরোমণি কর্তৃক চিংথোং খোম্বার রাজত্ব সময় ইহার বহুপরে বৈষ্ণবধৰ্ম্ম প্রচারিত হয়; শ্রীহট্টের ইতিবৃত্তের পূৰ্ব্বাংশে ১ম ভাগে তাহার উল্লেখ আছে এবং উত্তরাংশে প্রথম খণ্ডে ইতিপূৰ্ব্বে বর্ণিত হইয়াছে। সম্ভবতঃ কল্যাণবর কাছাড়ের পূৰ্ব্ব প্রাপ্ত পর্যন্ত গিয়া থাকিবেন। চাপঘাটে যে মিশ্র বংশ আছে, কল্যাণবরের সহিত উহার কোনরূপ সম্বন্ধ আছে না কি? ৩৪. নবাব বশারত খা বাহাদুর প্রদত্ত উক্ত সনদের মৰ্ম্মঃ সরকার শ্রীহট্টের অন্তর্গত পঞ্চখণ্ড কালার বর্তমান ও ভবিষ্যতের কৰ্ম্মচারী ও চৌধুরী ও কানুনগো সকল জ্ঞাত হইবেন যে পূৰ্ব্ব সনন্দানুসারে বার্ষিক মং ৪ টাকা ও ১০/০ হাল জমি ও এক বাড়ী খরিদা xx তাং কাশীনাথ ও হরিনাথ হইতে ও তাং দুর্লভরাম চৌধুরী হইতে ॥০ ছয় কেদার জমি গোকুল মিশ্রের ও বিশ্বনাথ মিশ্রের মদতমাস বাবতে আছে। অদ্য পূৰ্ব্ব নিয়মে তাহা বাহাল করা গেল। উচিত যে তাহাদের দখলাধিকারে থাকে। সন সন সনন্দ তলব ইত্যাদি কষ্ট দেওয়া না হয়। আর জমি আবাদ ক্রমে তাহার উপস্বত্ব ভোগ করতঃ আশীৰ্ব্বাদ করিতে থাকে, ইহা তাগিদ জানিবা । তাং রমজান ৩ মোবারক সন ৩। (মোহরে-মোহাম্মদ শাহ গাজী বাদশাহ ফিদেরি বশারত খান বাহাদুর লিখিত) পরবর্তীকে পূৰ্ব্ববৰ্ত্তীর সনন্দ দাখিল ক্রমে বাহাল করাইয়া নিতে হইত। এই সনন্দে তাহা হইতে মুক্ত দেওয়া হয়। ইহাতে জানা যায় যে কাশীনাথ ও হরিনাথের প্রাপ্ত ভূমি তাহদের উভয়ের যুক্ত নামে এক তালুকে পরিণত হইয়াছিল।
