পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/১৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রথম অধ্যায় : পঞ্চখণ্ডের ব্রাহ্মণগণ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ১৪৩ পূৰ্ব্বোক্ত সনন্দ প্রাপক বিশ্বনাথের ভ্রাতুষ্পপুত্র উমাকান্তের রাজকৃষ্ণ নামে পরম সুন্দর একটি পুত্র হয়, ইহার চরিত্র অতি মধুর ও পবিত্র ছিল; তিনি একদা গোবিন্দজি দর্শনে মণিপুরে গমন করেন। মণিপুরাধিপতি তাহার ধৰ্ম্মনিষ্ঠা ও নিৰ্ম্মল চরিত্র-গৌরবে মোহিত হইয়া তাহাকে একখানা শাল ও একশত মুদ্রা পুরষ্কার প্রদান করেন। রাজদত্ত এই মুদ্রা প্রাপ্ত হইয়া তিনি কামাখ্যাতীর্থে গমন করিয়াছিলেন । ইহার পৌত্র শ্ৰীযুত যোগেশ চন্দ্র মিশ্র হইতে এই বংশীয়গণের বিবরণ আমরা প্রাপ্ত হইয়াছি। পঞ্চখণ্ডের পাল ও সেন প্রভৃতি অন্যান্য বংশ বিবরণও তিনি সংগ্ৰহ করিয়া দিয়া উপকৃত করিয়াছেন। পঞ্চখণ্ডের অন্যান্য ব্রাহ্মণ বংশ ঘুঙ্গাদিয়ার কাশ্যপ গোত্র পঞ্চখণ্ড বহু ব্রাহ্মণের বসতি স্থান, আমরা অল্প কয়েকটি বিবরণই প্রাপ্ত হইয়াছি, অপ্রাপ্ত পরিচয় তত্ৰত্য সনন্দ প্রাপকবর্গের নামাদি দ্বিতীয় পরিশিষ্টে প্রদত্ত হইবে। পঞ্চখণ্ডের ঘুঙ্গাদিয়া গ্রামের কাশ্যপ গোত্রীয় ব্রাহ্মণগণ বেশ সম্মানিত; কাশ্যপ গোত্রে রতিরাম চক্রবর্তী একজন বিখ্যাত ব্যক্তি ছিলেন, তিনি নবাব শমশের খা বাহাদুর হইতে এক সনন্দে (নং ৮৫০) পঞ্চখণ্ড কালায় ১ws:(0,i-ভূমি ব্ৰহ্মত্র প্রাপ্ত হন। ঐ কাশ্যপ গোত্রে নয়াগ্রামে সানন্দরাম তর্কবাগীশ নামে আর এক বিখ্যাত নৈয়ায়িক পণ্ডিত ছিলেন, তিনি স্বগুণে নবাব মীর মোহাম্মদ হাদী বাহাদুর হইতে ৪ জলুস ৯ সাবান তারিখ যুক্ত সনন্দে (নং ৪৫০) পঞ্চখণ্ড কালা হইতে ৩ ভূমি ব্ৰহ্মত্র পাইয়াছিলেন; ১১৯৭ সালে তাহার মৃত্যু হয়, তখন তাহার পুত্র উহা ভোগ করেন। তিনি বহুতর ব্ৰহ্মত্র ভূমি প্রাপ্ত হন, ঐ সকল ভূমি "তাং সানন্দরাম” নামে খ্যাত হয়। গবর্ণমেণ্টের সংস্কৃত উপাধি পরীক্ষায় এ যাবৎ যাহার ন্যায় কেহই কৃতিত্ব প্রদর্শন করিতে সমর্থ হন নাই, এই বিবরণ প্রদাতা পঞ্চখণ্ডের সেই শ্রীযুক্ত রাতমনু ন্যায়সাঙখ্যাচুঞ্চ মহাশয় উক্ত তর্কবাগীশের বংশোদ্ভব। তত্ৰত্য গৌতম গোত্রীয়গণ এই ঘুঙ্গাদিয়া গ্রামের গৌতম গোত্রীয় ব্রাহ্মণ বংশও বিখ্যাত বটে। এই বংশের বীজী পুরুষ রামভদ্র ভট্টাচাৰ্য মিথিলা হইতে আগমন করেন। ইহার পুত্রের নাম রামকান্ত ন্যায়ভূষণ, তৎপুত্র হরেকৃষ্ণ ভট্টাচাৰ্য্য। তাহার পুত্রের নাম রামজীবন তর্কপঞ্চানন। ইহার এক চতুষ্পাঠী ছিল। তদীয় জনৈক শিষ্য হইতে তিনি গুরুদক্ষিণা স্বরূপ কতক ভূমি দান প্রাপ্ত হন। রামজীবনের প্রাপ্ত ভূমি "রামটিকর” নামে অভিহিত হয়। রামজীবনের পুত্র কৃষ্ণকান্ত বিদ্যালঙ্কার, তৎপুত্র রঘুনাথ ভট্টাচাৰ্য্য, তাহার পুত্রের নাম বলভদ্র চূড়ামণি। ইনি একটি বৃহৎ দীঘ খনন করিয়া যশস্বী হন: ঐ দীঘী "চূড়ামণির দীর্ঘী" নামে অদ্যপি খ্যাত আছে। চূড়ামণির দুই পুত্র রামরাম ও বলরাম এই দুই ভ্রাতা হইতে দুইটি শাখায় এবং বংশ বিস্তৃত হইয়া পড়িয়াছে। রাম রামের পুত্রের নাম শ্রীরাম ভট্টাচার্য, তাহার পুত্র নরসিংহ চক্রবর্তী, রতিদেব চক্রবর্তী ও রন্দ্ররাম বাচস্পতি । ইনি নবাব হরকিষুণ দাস মনসুর উলমুলক বাহাদুর হইতে বার্ষিক ৯০ কাহন কৌড়ির বৃত্তি প্রাপ্ত হন। পরে উক্ত বৃত্তির পরিবর্তে ১৮টি তালুক হইতে ৯০/ হাল ভূমি প্রাপ্ত হইয়াছিলেন। উহা অনেক দিন যাবৎ তাহাদের অধিকারে ছিল। রতিদেব চক্রবত্তী ঐ ভূমির শাসন সংরক্ষণ করিতেন, তাহার স্বহস্ত লিখিত অনেক কাগজ পত্র এখনও পাওয়া যায়।