পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

[ষোল] গেলে শুনিতে পাইলাম যে সে ডাকিতেছে- তাহার অমৃত-মধুর আধ স্বরে বলিতেছে- “বাবা আইও” । সাতদিন যাইতে না যাইতে তাহার জুর হইল, আর সেই ডাক- শুনিয়াছি সেই ডাক-“বাবা আইও” (এস) থামিল না; কেহই থামাইতে পারিল না। সে বুঝি মনে করিত যে তাহার সুধা-স্রাবি মধুর আহবান তদীয় পিতাকে আকর্ষণ করিয়া আনিবে! যাহা হউক কিছুদিন পরেই ছেলের অসুখ হইয়াছে বলিয়া চিঠি পাইলাম। বিচলিত হইলাম কিন্তু কঠোর কৰ্ত্তব্যের সম্মুখে তখনও স্নেহ দাড়াইতে সাহসী হইল না। কি করিব- কালী ঘাটে গিয়া জগনতার শ্রীচরণে মাতৃহীন রোগক্লিষ্ট শিশুকে সমর্পণ করিয়া তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করিতে লাগিলাম, কাজ একরূপ শেষ করিয়া বাড়ী আসিলাম, কিন্তু তখন তাহার পীড়া কঠিন হইয়া পড়িয়াছে। ইতিবৃত্ত (পূৰ্ব্বাংশ) রূপ মানস-পুত্ৰ পাইলাম, কিন্তু আমার সোনার কুসুমাঙ্গকে চিরতরে হারাইলাম । আর এই উত্তরাংশের সহিত হারাইয়াছি- আমার হৃদয়পটের নিৰ্ম্মল আলেখ্য নীলিমাকে! ভ্রান্ত মানব আমরা; তাই জগৎপিতার অজস্র স্নেহ তৈল ধারার ন্যায় সৰ্ব্বত্রই যে বহিতেছে, অনেক সময় তাহা অনুভব করিতে অক্ষম হই; বুঝিতে পারি না- বিয়োগের প্রতপ্ত শ্বাসে অসময়ে সুখের উৎস শুখাইয়া যায় কেন? সুখে শোক-স্মৃতি মিশ্রিত হয় কেন? ইতিবৃত্ত পূৰ্ব্বাংশ প্রকাশের পূৰ্ব্বে পুত্রকে হারায়াছি, আর উত্তরাংশ প্রচারের প্রাক্কালে প্রাণের দুহিতাকে খোয়াইয়াছি, কন্যার বিয়োগ পুত্রের শোক নতুন করিয়া তুলিয়াছে!! নিয়তি এড়াইবে সাধ্য কার? কিন্তু কাৰ্য্য কারণ বিচারেই আমরা সংসারিক লাভালাভ ও সুখ দুঃখ সংঘটনের সুত্রানুসন্ধান করিয়া থাকি, এবং সে জন্যই আজি এ আনন্দ সম্যক সম্ভোগ করিতে পারিতেছি না । হায় মায়া মোহ! জীবন জলবিম্বের প্রায়, অথচ কাজ সুদীর্ঘ ও বৃহৎ এজন্য মনে হইত যে অন্ততঃ যদি ইতিবৃত্তের সম্পূর্ণ কপিটা লিখিয়া যাইতে পারি, তবুও ধন্য হইব। ভগবদিচ্ছায় তাহা সফল হইয়াছে- সম্পূর্ণ গ্রন্থ প্রকাশিত হইয়াছে, তজ্জন্য তাহার শ্রীচরণে সভক্তি প্রণত হইতেছি। ইতি— “মৈনা” শ্ৰী অচ্যুতচরণ চৌধুরী ৩০শে চৈত্র ১৩২৩ বাংলা ।