পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/১৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৬০ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত তৃতীয় ভাগ-দ্বিতীয় খণ্ড পাল বংশের কথা পঞ্চখণ্ডের পাল ও দত্ত বংশ এ সবডিভিশনে অতি প্রাচীন। “পঞ্চখণ্ডে সতত বুধসভা পালদত্তৌ ক্ষিতীশে" ইতিবাক্যে দেশ প্রদীপের প্রসিদ্ধ গ্রন্থকার এই বিখ্যাত বংশদ্বয়ের অবস্থিতি হেতু পঞ্চখণ্ডের গৌরব ঘোষণা করিয়াছেন। এই পাল বংশের প্রবৰ্ত্তকের নাম রাজা মহীপাল বলিয়া কথিত হয়। পাল রাজগণের নামের তালিকায় বহুসংখ্যক মহীপালের নাম পাওয়া যায়। ভিন্ন ভিন্ন স্থানে তাহাদের কীৰ্ত্তির নিদর্শনও পরিলক্ষিত হয়। পঞ্চখণ্ডের পাল বংশের প্রবৰ্ত্তক তাহাদের কীৰ্ত্তির নিদর্শনও পরিলক্ষিত হয়। পঞ্চখণ্ডের পাল বংশের প্রবক্তক তাহাদের কেহ কিনা বলা যায় না। হইলেও কোন সময়ে কি কারণে তিনি এদেশে আসিয়া স্বীয় প্রভাব বিস্তার করেন, তাহা জানিবার উপায় নাই। পঞ্চখণ্ডের ভূস্বামী বলিয়াই হউক, কি অন্যকোন কারণেই হউক, তিনি “রাজা" বলিয়া খ্যাত ছিলেন। প্রায় পঞ্চবিংশতি পুরুষ পূৰ্ব্বে এই বংশে কালিদাস পাল নামে এক ক্ষমতাবান ব্যক্তি ছিলেন, এ দেশে তিনি যে সম্পূর্ণ স্বাধীন ভাবে অবস্থিতি করিতেন, তাহা জ্ঞাত হওয়া যায়। তৎকালে এ অঞ্চল অনেকাংশে অনাবাদ ছিল, কালিদাস স্বীয় লোকজন দ্বারা তাহা বহুলাংশে বাসোপযোগী করেন; এই আবাদ কারিগণ মাহিমাল জাতীয় ছিল; ইহাদের সর্দার দ্বয়ের নাম রাঘাই ও বসাই, ইহাদের বংশধরবর্গ অদ্যাপি আছেন। ফলতঃ কালিদাস পাল হইতেই এবংশের প্রতিপত্তি বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়; এবং এ বংশ-তালিকাও কালিদাস পাল হইতে আরম্ভ করা হইয়াছে। কালিদাসের পৌত্রের নাম হরপ্রসাদ, ইহার তিন পুত্র, তন্মধ্যে বারাণসী পাল জ্যেষ্ঠ ইনি একটি সুবৃহৎ দীর্ঘিকা খনন করাইয়া ছিলেন, উহা “বারপালের দীর্ঘী" নামে খ্যাত হইয়াছে। এই দীর্ঘকা-তীরবর্তী পালবংশীয়গণের বসতি গ্রাম “দীঘীর পার” নামে আখ্যাত হয়। বারাণসীর ভ্রাতুষ্পপুত্র গৌরীচরণ জনৈক বৈষ্ণবকে ২২/০ হাল ভূমি দান করিয়াছিলেন, উহা “বৈরাগীর চক" বলিয়া খ্যাত হয়। গৌরীচরণের ভ্রাতা গৌরকিশোর, তাহার পৌত্র ছিলেন চারিজন; তন্মধ্যে জ্যেষ্ঠ রামজীবন পূৰ্ব্ব গৌরব স্মরণে "রাজা রামজীবন পাল" এইরূপ নাম সাক্ষর করিতেন। এই সময় পর্যন্ত তাহারা একরূপ স্বাধীনই ছিলেন, কাহাকেও রাজস্ব দি দিতেন না। ইহার পর হইতেই তাহারা নবাবের অধীনতা স্বীকার করেন। ব্যক্তি ছিলেন। এই ভ্রাতৃবর্গের মধ্যে জ্যেষ্ঠ গদা পাল বা গদাধর পাল ঘুঙ্গাদিয়া গ্রামে একটি প্রকাণ্ড দীর্ঘিকা খনন দ্বারা কীৰ্ত্তিমান হইয়াছেন; উক্ত দীর্ঘিকা আজ পর্য্যন্ত তাহার নামানুসারে “গদাপালের দীর্ঘী" নামে খ্যাত আছে, ঘুজ্ঞাদিয়ার পালবংশীয়গণ তাঁহারই অধস্তন বংশ ২ গদাপালের কনিষ্ঠভ্রাতা শম্ভুপালও একটি দীর্ঘিকা খনন করাইয়া যশস্বী হন, ঐ দীঘী তাহার নামেই খ্যাত হইয়াছে। ইহাদেরই সৰ্ব্বকনিষ্ঠ ভ্রাতা প্রতাপচন্দ্র মোসলমান ধৰ্ম্ম অবলম্বনে প্রচণ্ড খা নামে খ্যাত হন; তাহার বংশীয়গণ অদ্যপি সম্মানের সহিত বাস করিতেছেন। পরবর্তীকালে পালবংশীয় বাণেম্বর ও ভবানী নারায়ণ পাল দুইটি দীঘী খনন করিয়া যশস্ব হইয়া গিয়াছেন । পাল বংশীয় চৌধুরীগণের অনেক দেবত্র ও ব্রহ্মত্র দানের জনশ্রুতি আছে, কিন্তু তত্তাবতের নিদর্শন এক্ষণে দুষ্প্রাপ্য হইয়াছে। পরবত্তীকালে প্রাপকগণের উত্তরাধিকারিগণ নিজ নিজ নামে ১. পালবংশ তালিকা এ গ্রন্থ সংলগ্ন এ পরিশিষ্টে প্রদত্ত হইবে। ২. পরিবত্তী ৫ অধ্যায় দ্রষ্টব্য ।